শতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২৫৫টির বেশি মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সেন্টার, বিভাগ ও ইনিস্টিটিউট এসব গবেষণা পরিচালনা করছে।
এছাড়া বিভিন্ন বিভাগ ও ইনিস্টিটিউট তাদের নিজ নিজ অ্যাকাডেমিক ডিসিপ্লিনকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের অর্জন ও প্রত্যাশা নিয়ে ৫০টিরও বেশি মৌলিক গ্রন্থ রচনা করবে।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সার্বিক প্রস্তুতি জানাতে উপাচার্য এই ‘মিট দ্য প্রেসের’ আয়োজন করেন। এই আয়োজনে শতবর্ষপূর্তির বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।
উপাচার্য বলেন, ‘একযোগে ও পরিকল্পিতভাবে এতোগুলো গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করা একটি ল্যান্ড মার্ক । মৌলিক গবেষণা জোরদারের অংশ হিসেবে আমরা এই সংস্কৃতির ওপর জোর দিচ্ছি। এগুলো চলমান আছে। এই গবেষণাগুলো কখন শেষ করতে হবে সেই টাইম লিমিটও দেয়া আছে। পরিকল্পিতভাবে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।’
৫০টির বেশি মৌলিক গ্রন্থ রচনার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘প্রকাশনার মানদণ্ডে এটিও একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ।’
শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আরও কিছু গ্রন্থ ও সংকলন প্রকাশিত হবে।
এগুলো হলো ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯২১-২০২১): ক্রমবিকাশ’ শীর্ষক গ্রন্থ, ‘The University of Dhaka and the Making and Shaping of Bangladesh’ শীর্ষক গ্রন্থ, ‘শতবর্ষের আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ স্মারক সংকলন, সমাবর্তন বক্তা এবং উপাচার্যদের বক্তব্য নিয়ে একটি সংকলনগ্রন্থ, শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্লভ আলোকচিত্র নিয়ে ‘ফটো অ্যালবাম’, ‘শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: অর্জন ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রবন্ধ নিয়ে প্রবন্ধ সংকলন, কবিতা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত কবিতা নিয়ে ‘কবিতা সংকলন’ ইত্যাদি।
এছাড়া শতবর্ষের শুরুতে দেশ ও বিদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই এবং শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের নিয়ে ঢাকায় হওয়া ছয়টি আন্তর্জাতিক সেমিনার নিয়ে ছয়টি ভলিউম প্রকাশ করা হবে।
উপাচার্য বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ এবং দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কর্মপ্রয়াস গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে।’
মিট দি প্রেসে আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও শতবর্ষ উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. এ. এস. এম. মাকসুদ কামাল, ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রাব্বানী, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়াসহ অনেকে।
শতবর্ষপূর্তির পরিকল্পনায় আরও যা থাকছে
# শতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘শতবার্ষিক স্মৃতিস্তম্ভ’ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই মনুমেন্টের মূল থিম Monument of Infinity Reflecting Vastness, Inclusiveness and Magnanimity, বাংলায় যার র্অথ অসীমতার স্তম্ভে বিশালতা, অন্তর্ভুক্ততা ও উদারতা।
# ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু ওভারসিস স্কলারশিপ’ পুনঃপ্রবর্তন করা হয়েছে। এই স্কলারশিপের আওতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে তরুণ শিক্ষকরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার্থে পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যয়নের জন্য সুযোগ পাবেন। এর আগে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বঙ্গবন্ধু ওভারসিজ স্কলারশিপ’ প্রবর্তন করেছিলেন। ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৮ সাল থেকে এই স্কলারশিপ পুনঃপ্রবর্তন করা হয়।
# জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, আদর্শ, সংগ্রাম, ত্যাগ, দেশপ্রেম, নেতৃত্বসহ সকল বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস এন্ড লিবার্টি’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষকবৃন্দের সমন্বয়ে ‘বঙ্গবন্ধু বক্তৃতামালা’র আয়োজন করা হচ্ছে।
# ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বর্ণপদক’ প্রবর্তন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস এন্ড লিবার্টির বোর্ড অফ গভর্নসের প্রথম সভায় এই স্বর্ণপদক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতিবছর ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পদক প্রদান করা হবে। ২০২২ সাল থেকে এই পদক প্রদান শুরু হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস এন্ড লিবার্টি এই স্বর্ণপদক প্রদান করবে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিকরা এই পদকের জন্য মনোনীত হবেন।
# গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক কর্মদক্ষতা, ভাষাদক্ষতা ও করপোরেট শিষ্টাচার জ্ঞান অর্জনসহ তাদের অধিকতর নিয়োগযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য গ্র্যাজুয়েট প্রমোশন অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক বিশেষ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমমণ্ডলে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের মর্যাদাকর অবস্থান টিকিয়ে রাখা, এসডিজি অর্জনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে এই কর্মসূচির আওতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও ইনস্টিটিউট নিজ নিজ গ্র্যাজুয়েটদের স্বার্থে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আন্তঃসম্পর্ক ও আন্তঃসহযোগিতার জন্য সমঝোতা চুক্তি বা বিনিময় চুক্তি সম্পাদন করবে এবং গ্র্যাজুয়েটদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
# বিশ্ববিদ্যালয়ের Centre for Advanced Research in Sciences (CARS) ভবনে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার জন্য যে আরটি-পিসিআর ল্যাব তৈরি করা হয়েছিল সেটিকে ভাইরোলজি বিষয়ে গবেষণার জন্য একটি বিশেষায়িত গবেষণা ল্যাবে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এর নাম বায়োলজিক্যাল হ্যাজার্ড অ্যানালাইসিস অ্যান্ড হেলথ রিসার্চ ল্যাবরেটরি।
# একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা তথা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী বাংলাদেশ গড়তে গবেষণা উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ‘আইটি হাব’ তৈরি করা হবে। ‘আইটি হাব’-এর মাধ্যমে দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সমন্বিত করে জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হবে। এটি হবে শিক্ষাখাতে বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব সবুজ প্রযুক্তির তৈরি প্রথম ভবন।
শতবর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানসূচি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই লোটে শেরিং ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শতবর্ষের তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও শতবর্ষের ‘থিম সং’ পরিবেশন করা হবে। এছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ, ফটোগ্রাফি অ্যালবাম ও ওয়েবসাইট উদ্বোধন করবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ওইদিন বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় খ্যাতিমান শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।
উৎসবের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ দিন যথাক্রমে ২ ডিসেম্বর, ৩ ডিসেম্বর ও ৪ ডিসেম্বর ২০২১ কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় খ্যাতিমান শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।
সর্বশেষ ১২ ডিসেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে খ্যাতিমান শিল্পীদের ‘কনসার্ট’ পরিবেশনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের সমাপ্তি হবে।