বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জি কে শামীম কারাগারে, স্বপন চৌধুরী কোথায়?

  •    
  • ২০ নভেম্বর, ২০২১ ২০:৪২

যে মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীম, সেই একই মামলায় আসামি ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন। তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঠিকাদারি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রকল্প থেকে টাকাও তুলছেন।

জাল কাগজপত্র দাখিল করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবন নির্মাণের ৭৫ কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে সাবেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীম ও তার এক সহযোগী ঠিকাদার ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

ওই মামলায় জি কে শামীমকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন। অভিযোগ আছে, জি কে শামীম গ্রেপ্তার হলেও বাইরে থেকে ঠিকাদারি কাজের নামে অর্থ আত্মসাতে লিপ্ত স্বপন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক প্রতারণা মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।

২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবন নির্মাণের জন্য ৭৫ কোটি টাকার কার্যাদেশ যৌথভাবে পায় জিকেবিএল এবং দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স (জেভি)। মো. গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম ঢাকার জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল করিম চৌধুরী। কাজটি পাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান দুটিকে জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তির মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখানো হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ একাডেমিক ভবন (দ্বিতীয় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবন) নির্মাণকাজের জন্য ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স-জিকেবিএলকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর কাজটির চুক্তি হয়। এরপর ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর জাল কাগজপত্র দাখিল করে প্রতারণার মাধ্যমে কাজটি পাওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠান দুটির কর্ণধারদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২-এর সহকারী পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম। মামলার দুই আসামি হলেন জি কে শামীম ও ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, এই দুই কোম্পানি তাদের দরপত্রে দাখিল করা কাগজপত্রের সঙ্গে আগের পাঁচ বছরে কমপক্ষে একটি ৩৫ কোটি টাকার বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ সন্তোষজনকভাবে সমাপ্তির সনদপত্র জমা দেয়। আগের পাঁচ বছরে গড়ে কমপক্ষে ৪১ কোটি টাকার টার্নওভার এবং ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকার লিকুইড অ্যাসেটসংক্রান্ত কাগজপত্রও জমা দেয়।

মো. গোলাম কিবরিয়া শামীম ও মো. ফজলুল করিম চৌধুরী প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে কোম্পানির প্রকৃত নিবন্ধিত নামের সঙ্গে একক মালিকানাধীন ফার্মের নাম সংযুক্ত করে নিবন্ধনের সনদ জমা দেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো চুক্তির কাগজপত্র জমা দেননি। এ ছাড়া নিবন্ধিত প্রকৃত শেয়ারসংখ্যার চেয়ে বেশি শেয়ার দেখানো হয়। ১০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা ও টার্নওভারসংক্রান্ত যে কাগজপত্র জমা দেয়া হয়, তাও জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির অযোগ্যতা ও অদক্ষতার সুযোগে ব্যবসায়ী হিসেবে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে অতি সূক্ষ্ম তথ্যগত জালিয়াতির মাধ্যমে ক্রয়-প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করে ওই কার্যাদেশ হাসিল করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

ধরাছোঁয়ার বাইরে স্বপন চৌধুরী

প্রায় ৭৫ কোটি টাকার প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ধীরগতিতে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪২ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে জিকেবিএল-দি বিল্ডার্স। সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের আওতায় ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর জি কে শামীম গ্রেপ্তার হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন। জি কে শামীম কারাগারে থাকলেও স্বপন চৌধুরী পুরো কাজ তদারকি করছেন, মাঝে মাঝে বিলের টাকা তুলছেন।

দুদকের মামলার পরও কেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বাতিল করা হয়নি, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিকেবিএল-দি বিল্ডার্স জাল কাগজ জমা দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নিয়েছে, এটা আমরা জেনেছি দুদকের মামলার পর, ততদিনে অনেকটুকু কাজ এগিয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনা করে দেখল যে, এখন যদি কাজটা বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে রাষ্ট্রের অনেক টাকা নষ্ট হবে। সেই সঙ্গে কাজ বন্ধ করে আবার নতুন কাউকে কাজ দিতে গেলে মাঝে অনেক সময় নষ্ট হবে। সে জন্য আমরা কাজটি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই তুলে আনতে চাইছি। তা ছাড়া মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের কাজের ওপর আদালত থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞাও আসেনি। তাই এই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করাতে আইনি কোনো বাধা নেই। তারা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি শেষ করবে বলে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে কাজ শেষ না হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে দুদকের মামলার পর সেটির তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তদন্তকাজ শেষ হতে আর কত সময় লাগেবে, সেটিও নিশ্চিত করতে পারছেন না দুদকের কোনো কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। সেই সুযোগে গ্রেপ্তার এড়িয়ে ঠিকাদারি কাজের নামে নানান প্রতারণা করে যাচ্ছেন ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন।

তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামকে ফোন করা হলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

এরপর দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২-এর উপপরিচালক লুৎফুল কবীর চন্দনের কাছে একই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও কোনো তথ্য দিতে পারবেন না জানিয়ে প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

এরপর কয়েক দফা দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরেফ সাদিককে টেলিফোন করা হলে এ মামলার তদন্তের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি তিনিও। তবে জানান, শিগগিরই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

চট্টগ্রামে দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লোকবলসংকটের কারণে এই মামলা তদন্তে ধীরগতি রয়েছে। অন্যান্য তদন্তের চাপ থাকায় সময়মতো চার্জশিট দিতে পারছেন না দুদকের এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।’

জি কে শামীম গ্রেপ্তার হলেও ফজলুল করিম স্বপন গ্রেপ্তার হচ্ছেন না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিষয়। চার্জশিট দাখিল হলে আর সেখানে যদি ওই আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়, তখন আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যদি প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন। এখন মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন কি না, তা তদন্ত কর্মকর্তাই ভালো বলতে পারবেন।’

মামলার সবশেষ শুনানি আর পরবর্তী শুনানি কবে, জানতে চাইলে মাহমুদুল হক বলেন, ‘শেষ শুনানি কবে ছিল তা ঠিক মনে নেই, তবে সম্ভবত ২৩ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য আছে।’

ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকের এই মামলা ছাড়াও অর্থ আত্মসাতের একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। কিন্তু এরপরও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন স্বপন চৌধুরী।

এ বিভাগের আরো খবর