রাজধানীর আদাবর থেকে নিখোঁজ হওয়া সেই তিন বোনকে তাদের দাদির জিম্মায় দিয়েছে আদালত।
শনিবার সেই তিন বোনকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) সূত্রে আদালতে হাজির করে আদাবর থানার পুলিশ।
এর আগে অবস্থান শনাক্ত করে প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের যশোর থেকে উদ্ধার করে র্যাব। পরে তাদের জিম্মায় নেয়ার আবেদন করেন দাদা-দাদি। এই আবেদন আমলে নিয়ে ঢাকার মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী তিন বোনকে দাদির জিম্মায় নেয়ার আদেশ দেন।
আদাবর থানার পুলিশের উপপরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার আদাবর এলাকার একটি বাসা থেকে এসএসসির দুই পরীক্ষার্থীসহ তিন বোন নিখোঁজ হন। সকালে আদাবরের শেখেরটেকে খালার বাসা থেকে তারা বের হয়েছিলেন। সেদিনই তাদের সন্ধান চেয়ে আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন খালা। তিনি দাবি করেন, নিখোঁজ তিন বোনই টিকটকে আসক্ত।
পরে সাধারণ ডায়েরি আমলে নিয়ে প্রযুক্তির সহযোগিতায় ওই তিন শিক্ষার্থীর অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয় র্যাব। তারা অসুস্থ বাবাকে দেখতেই খালাকে না জানিয়ে যশোরে গিয়েছিলেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় র্যাব-২-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু নাঈম মো. তালাত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল তিন বোনের নিখোঁজের তথ্য পাওয়ার পর থেকেই আমাদের অভিযান চালু ছিল। পরে আমরা জানতে পারি, অসুস্থ বাবাকে দেখার জন্যই তারা খালার বাসা থেকে না বলে বের হয়ে যশোরে তাদের বাবার বাড়িতে গিয়েছেন। তাদের এই না বলে চলে যাওয়াটা একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। তারা কোনো বিপদে পড়েছেন এমন আশঙ্কাই ছিল শুরুতে।’
তাদের খালা কি নির্যাতন করতেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এ রকম কোনো কিছু না। তারা মূলত অসুস্থ বাবাকে দেখতেই যশোর গিয়েছেন। মা মারা যাওয়ার পর থেকেই তারা ঢাকায় খালার বাসায় ছিলেন।’
সেদিনই নিখোঁজ তিন বোনের খালা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বড় বোন কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। আর দুলাভাই অন্য জায়গায় বিয়ে করেছেন। আমার ছোট বোনের বাসা খিলগাঁওয়ে থাকত তারা। দুজনের এসএসসি পরীক্ষার সেন্টার ছিল ধানমন্ডি গার্লস হাই স্কুলে। এ জন্য আদাবরে আমার বাসায় নিয়ে আসি পরীক্ষা দেয়ার জন্য। একটি পরীক্ষা হয়েছে, আরও দুটি পরীক্ষা বাকি। এর মধ্যেই তারা হঠাৎ তিনজন বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায়।’
খালা জানান, তিন বোনের মধ্যে বড়জন ভোকেশনাল পাস করেছেন। যুব উন্নয়ন কেন্দ্রে একটি কোর্স করছিলেন তিনি।
পুলিশ জানায়, ২০১২ সালে বাবা-মা আলাদা হয়ে গেলে ওই তিন বোন মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। ২০১৩ সালে তাদের মা ক্যানসারে মারা যান। তারপর তিন বোন তাদের দুই খালার সঙ্গে থাকছিলেন।
তরুণীদের অভিযোগ, মা মারা যাওয়ার দীর্ঘদিন হলেও তাদের বাবা-চাচাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি এই দীর্ঘ সময় তারা তাদের বাবাকে পর্যন্ত দেখতে পাননি।
শনিবার তিন বোনকে ঢাকায় আনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘যশোর কোতোয়ালি থানার সহযোগিতায় তিনজনকে উদ্ধার করে ঢাকায় আনা হয় ।’
এদিকে খালার দাবি অনুযায়ী টিকটক ভিডিও তৈরির জন্যই তিন বোন বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশ।