আন্দোলনে সফল না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের শপথ করিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নেতা-কর্মীরা দুই হাত তুলে এ শপথে অংশ নেন।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনশনের পর সমাবেশ থেকে আন্দোলনের ডাক দেয়ার পাশাপাশি শপথ করানো হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে এ আন্দোলন বলে জানান ফখরুল।
শনিবার ৭ ঘণ্টাব্যাপী গণ-অনশন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী গণ-অনশন শেষ করান ফখরুলকে পানি পান করিয়ে।
এ সময় মহাসচিব বলেন, ‘আসুন আমরা দুই হাত তুলে সংহতি জানিয়ে শপথ করি। আমরা আমাদের দেশনেত্রীর মুক্তি ও তাকে বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য না পাঠানো পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না।
‘আন্দোলনে সফল না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হব।’
রাজপথে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা আমাদের জীবন-মরণের সমস্যা। ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম, সে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা মা ও মাটি বলতে খালেদা জিয়াকে বুঝি। তাই নেত্রীকে অবশ্যই আমাদের মুক্ত করতে হবে। তার জন্য আমরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি।
‘নেত্রী সারা জীবন দেশের মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন। অল্প বয়সে তিনি স্বামী হারিয়ে দুটি শিশুসন্তান নিয়ে জনতার কাতারে মিশে গেছেন। তিনি এ দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। যিনি নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করেছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছেন, তিনি জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। সেই নেত্রী খালেদা জিয়া, যাকে আমরা মা বলে জানি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার বেআইনিভাবে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা তিন বছরের বেশি সময় খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখেছে। কারণ তারা জানে, দেশনেত্রী বাইরে থাকলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কেউ বিপন্ন করতে পারবে না। জনগণের ভোটের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
‘খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমরা বিদেশের চিকিৎসকদের সঙ্গে বারবার কথা বলেছি। তারা বলছেন, বাংলাদেশে তাকে যতটা চিকিৎসা সম্ভব, তা দেয়া হয়েছে। এখন তাকে বিদেশে না নিলে আর সুস্থ করা যাবে না।’
সরকারের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘পরিষ্কার ভাষায় বলছি, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। অবিলম্বে তাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা আপনাদের গদিচ্যুত করবে।'
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সকাল ৯টায় শুরু হওয়া গণ-অনশন শেষ হয় বিকেল ৪টায়।
ফখরুলের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।
সমাবেশে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, রুহুল কবির রিজভী, নিতাই রায় চৌধুরী, জয়নুল আবেদীন, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, মাহবুব উদ্দীন খোকন, আফরোজা আব্বাস, সাইফুল আলম নীরব, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শহীদুল ইসলাম বাবুল, ফজলুর রহমান খোকনসহ বিএনপি নেতারা বক্তব্য দেন।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক), জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, এলডিপির ড. রেদোয়ান আহমেদ, শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের আব্দুল করিম, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. ওবায়দুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকনসহ অনেকেই গণ-অনশনে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন।