বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুরস্কৃত হচ্ছে ইআরএল, হবে দ্বিগুণ সক্ষমতার আরেক ইউনিট

  •    
  • ২০ নভেম্বর, ২০২১ ১৪:৫৭

দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের আরেকটি ইউনিট স্থাপনের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল আরও এক দশক আগেই। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় তা আটকে ছিল। অবশেষে চলতি বছরই ফরাসি কোম্পানি টেকনিপের সঙ্গে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার চূড়ান্ত চুক্তির মধ্য দিয়ে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসার টার্গেট নতুন শোধনাগারের।

১৯৬৮ সালে অপারেশন শুরু করেছিল দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)।

১৯৯৮ সালে ৩০ বছরের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হলেও এখনও পুরো যৌবন ধরে রেখে উৎপাদনের রেকর্ড গড়ছে ১৫ লাখ টন উৎপাদন সক্ষমতার এই তেল শোধনাগারটি। এ কারণে ২১ নভেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে এই প্রতিষ্ঠানকে।

ফরাসি প্রতিষ্ঠান টেকনিপ-ফ্রান্সের তৈরি করা শোধনাগারটির কার্যক্ষমতায় সন্তুষ্ট সরকার এবার ওই প্রতিষ্ঠানকে দিয়েই দ্বিগুণ সক্ষমতার আরেকটি ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগে নানা ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, জমির অভাব, এক সাবেক জ্বালানি সচিবের অসহযোগিতা ও একটি বেসরকারি কোম্পানির ষড়যন্ত্রে গত ১০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট। অবশেষে চলতি বছরের মধ্যেই ফরাসি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার চূড়ান্ত চুক্তি হতে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসার টার্গেট নতুন শোধনাগারের।

ধারণা ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদ্য শেষ হওয়া প্যারিস সফরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সামনেই টেকনিপ-ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি সই হবে। তবে চূড়ান্ত চুক্তি সইয়ের বিষয়ে এখনও কিছু আলোচনা বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা তো অনেক বড় কমপ্লেক্স। বর্তমান ইউনিটের দ্বিগুণ। আমাদের বর্তমান ইউনিটের ক্যাপাসিটি ১৫ লাখ মেট্রিক টন। দ্বিতীয় যে ইউনিটটি হবে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন। এটা হাইলি টেকনিক্যাল প্রজেক্ট। তাই এটা শুরুতেই গুছিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে। টেকনিপ-ফ্রান্স আমাদের যে টেকনিক্যাল অফারটা দিয়েছে, তার ইভ্যালুয়েশনের কাজ চলছে। আমাদের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভারতের ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)। ইআইএল ইন্ডিয়া, ইআরএল, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও মন্ত্রণালয় মিলে আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান খোঁজা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ গত মাসে আমরা ৮টি মিটিং করেছি। টেকনিক্যাল আলোচনা শেষ পর্যায়ে আছে।’

লোকমান হোসেন জানান, এরপরই কমার্শিয়াল আলোচনা শুরু হবে। কমার্শিয়াল আলোচনা সফল হলে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি আসবে। টেকনিপ-ফ্রান্স এই কাজটি করবে। প্রকল্পের বেসিক ডিজাইনও তারা করছে। ইপিসি বা কনস্ট্রাকশন কাজটি তাদের দেয়ার জন্য আলোচনা চলছে।

পথে পথে বাধা

সরকারের জ্বালানি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, শুরু থেকেই নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ে প্রকল্পটি। প্রথমে প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি ও অর্থের অভাবের কথা বলা হয়। দ্বিতীয় ইউনিট তৈরিতে প্রয়োজন ছিল ১২৫ একর জমি। কিন্তু ইআরএলের ছিল মাত্র ৬৪ একর।

প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান হোসেন জানান, ইতিমধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়নের জমির সংস্থান হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা জিএম কোম্পানি বা জেনারেল ইলেকট্রনিক্সের কাছ থেকে ৪৫ একর, পদ্মা ওয়েল কোম্পানির কাছ থেকে ১১ একর ও সরকারের কাছ থেকে সাড়ে ৭ একর খাসজমিসহ ৬৪ একর লিজ নিয়েছি।’

প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়েও ছিল এক ধরনের অনিশ্চয়তা। কোথা থেকে অর্থ আসবে তা নিয়েও ছিল ফাইল চালাচালির লড়াই। অবশেষে সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বা বিপিসি প্রকল্প ব্যয়ের ৮০ ভাগ অর্থায়ন করবে। বাকিটা দেবে সরকার।

এর বাইরে ফরাসি প্রযুক্তির উচ্চমূল্যের দোহাই দিয়ে একজন সাবেক জ্বালানি সচিবসহ সরকারের একটি অংশও এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছিল। তারা ফরাসি কোম্পানি বাদ দিয়ে অর্ধেক দরে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইআরএলের প্রথম ইউনিটের পারফরম্যান্সের কথা বিবেচনায় নিয়ে টেকনিপকে দিয়েই প্রকল্প বাস্তবায়নে চূড়ান্ত মত দেন।

অন্যদিকে দেশের এক শীর্ষ গ্রুপ অব কোম্পানিজ শুরু থেকেই এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছিল বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। কোম্পানিটি চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি বড় ধরনের রিফাইনারি করার পরিকল্পনা করছে। দেশের একমাত্র বিটুমিন উৎপাদন প্ল্যান্টও তাদের। আবার এলপিজি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও প্রায় তাদের হাতে। ফলে তারা নানাভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছিল।

তবে ইআরএল এমডি জানান, এই প্রকল্পের প্রতিবন্ধকতা মূলত কয়েকটি টেকনিক্যাল আইটেম নিয়ে। যেমন- কেয়ার এন্ড কাস্টিউর ট্রান্সফার, পার্সোনাল গ্রান্টি অফ দ্য প্ল্যান্ট। এসব নিয়ে তাদের টেকনিপের সঙ্গে আলোচনা ঝুলে যায়। তবে সেই জটিলতাগুলো এখন অনেকটাই কেটে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, দেশের ৮০ ভাগ চাহিদা এখান থেকে পূরণ হোক। দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা তো কোনো দিনই কমবে না। বাড়তেই থাকবে। অপরিশোধিত তেল কিনে এনে তা শোধন করলে দেশ যেমন শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রারও অপচয় কমবে। জ্বালানি নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।’

তিনি জানান, সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এ বছরের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ফ্রান্সের টেকনিপ-ফ্রান্স এর সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিপিসির পরিচালক অপারেশন সৈয়দ মেহেদি হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শুরুর সমস্যা কাটিয়ে প্রকল্পটি যথাসম্ভব দ্রুত বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে বিপিসি। এই প্রকল্পে সরকারি তরফে ২০ শতাংশ এবং বিপিসির পক্ষ থেকে ৮০ শতাংশ অর্থায়নের সিদ্ধান্তটি এখন পর্যন্ত বহাল আছে।’

অন্যদিকে বিপিসির উপব্যবস্থাপক প্ল্যানিং অ্যান্ড শিপিং মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটটি নির্মাণে সরকারি অর্থায়নের ২০ শতাংশ অর্থ বিদেশি বিনিয়োগ থেকে সংগ্রহের চেষ্টা করেছিল। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী চলমান কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে বিদেশি অর্থায়নের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। ফলে বিপিসিকে আবারও এই প্রকল্পের প্রস্তাব সংশোধন করতে হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধিত প্রস্তাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয়ভার ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা। এই ডিপিপি গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এখন এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শতভাগ ব্যয়ভার বিপিসিকেই বহন করতে হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, এটি শিগগিরই অনুমোদিত হয়ে আসবে।

পরামর্শক ভারতীয় ইআইএল

ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়নে পরামর্শকের ভূমিকায় আছে ভারতের ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)। ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি সই করা হয়। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারি কার্যালয়ে চুক্তির সময় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) মোসলেহ উদ্দিন ও ভারতের পক্ষে ইআইএলের নির্বাহী পরিচালক (মার্কেটিং) উপেন্দর মহেশ্বরী চুক্তিতে সই করেন। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও ভারতের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ১১০ কোটি ৬০ লাখ টাকার বিনিময়ে এই প্রকল্পের পরামর্শক হিসেব কাজ করছে ইআইএল।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড একটি ইউনিট দিয়ে দেশের জ্বালানি চাহিদার এক-চতুর্থাংশ পূরণ করছে। আরেকটি ইউনিট বাস্তবায়িত হলে দেশের মোট জ্বালানি চাহিদার ৭৬ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হবে। দেশের জ্বালানি সক্ষমতা ৩ মিলিয়ন টন বৃদ্ধি পাবে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।’

দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করা অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে একসময় রপ্তানি করত প্রতিষ্ঠানটি।

তবে এই প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হলেও নতুন কোনো প্ল্যান্ট এখনও সৃষ্টি হয়নি। ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি নির্ভরতাও।

চুক্তি হতেই এক যুগ

পরিশোধিত আমদানির চেয়ে তেল পরিশোধন লাভজনক হওয়ায় ২০১০ সালে সরকার দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য ৩০ মিলিয়ন পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন ইস্টার্ন রিফাইনারি-২ নামের নতুন একটি প্ল্যান্ট প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। সে সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু ১১ বছরেও প্রকল্প বাস্তবায়নে চূড়ান্ত চুক্তি করতে পারেনি সরকার।

অন্যদিকে ১০ বারের বেশি ব্যয় বাড়িয়ে এখন সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করে বিপিসির ঊর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি খাতের রিফাইনারিদের সুযোগ দিতে বিপিসির প্রকল্পটির বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও কাজ শুরু করতে পারেননি দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। যার কারণে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ও বিপিসি ও ইআরএলের নতুন প্রকল্প নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ বলে দাবি করেছেন তারা।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অনলাইনে বিপিসির বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পের পর্যালোচনা সভায় ইআরএলের দ্বিতীয় প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। প্রকল্প পরিচালকদের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার জন্য প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয় এর দায় নেবে না বলে ওই সভায় জানিয়ে দেন তিনি। প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে ওই সভায় মনিটরিং জোরদার করারও নির্দেশ দেন।

মন্ত্রীর নির্দেশনার পর ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স লিমিটেডের (ইএলবিএল) এমডি লোকমানকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের এমডি পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ইআরএলের সদ্য সাবেক এমডি মো. আকতারুল হক প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি দেখাতে না পারায় তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার থেকে প্রকল্পটির কাজ শুরুর জন্য বিপিসি ও রিফাইনারির দায়িত্বপ্রাপ্তদের বারবার নোটিশ করলেও অজানা কারণে প্রকল্পের কাজ নিয়ে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেননি তারা। এমনকি ইস্টার্ন রিফাইনারির প্রকল্পের কাজ বাদ দিয়ে বরং এই সময়ে বেসরকারি খাতের রিফাইনারির অনুমোদনের পরিমাণ বাড়ানো হয়।

এক নজরে ইআরএল

১৯৬৮ সালে ইআরএল শোধনাগারটির নকশা নির্মাণ করেছিল ফরাসি কোম্পানি টেকনিপ।

এই প্রকল্পে ১০টি প্রসেসিং ইউনিট রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিট সম্পন্ন হলে ইআরএল থেকে ফিনিশড প্রোডাক্ট হিসেবে পাওয়া যাবে এলপিজি, গ্যাসোলিন ইউরো-৫, ডিজেল ইউরো-৫, গ্রুপ-৩ বেসঅয়েল, জেট এ-১, ফুয়েল অয়েল, বিটুমিন ও সালফার। এতে আমদানি করা পরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্যে ব্যয় সাশ্রয় হবে।

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৯ হাজার ৭৯৩ টন এলপিজি, ৯৬ হাজার ৮২১ টন ন্যাপথা, ৮৭ হাজার ৮৬৬ টন এমএস (পেট্রল), ৫ হাজার ৮৫৩ টন এইচওবিসি (অকটেন), ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৭ টন এসকেও (কেরোসিন), ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৭০ টন এইচএসডি (ডিজেল), ২০ হাজার ২৪৯ টন জেবিও, ৩ লাখ ৩ হাজার ৫১১ টন ফার্নেস ওয়েল (এফও), ৫৮ হাজার ১৬২ টন বিটুমিন এবং ১০ হাজার ২৮৮ টন অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করে।

২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ইস্টার্ন রিফাইনারি ৪৬ হাজার ৫২৭ টন হাই স্পিড ডিজেল (এইসএসডি), ২৬ হাজার ২২৭ টন হাই অক্টেন ব্লেন্ডিং কম্পোনেট (এইচওবিসি) এবং ৫০ হাজার ৫১ টন ফার্নেস ওয়েল (এইচএস) আমদানি করে।

২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ৯৩ হাজার ৮৬ টন ন্যাপথা রপ্তানি করলেও পরের বছর থেকে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

মেয়াদ শেষের দুই যুগের মাথায় উৎপাদনে জোয়ার

১৯৯৮ সালে জীবনকাল শেষ হয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারির প্রথম ইউনিটের। সেই হিসাবে প্রায় দুই যুগ আগে মেয়াদ শেষ হওয়া প্রতিষ্ঠানটির যৌবন এখনও শেষ হয়নি। এবার ১৫ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন সক্ষমতার প্রতিষ্ঠানটি অতিরিক্ত ৪৫ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন করে রেকর্ড করেছে।

এতে খুশি হয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটিকে পুরস্কৃত করার জন্য। আগামী ২১ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে এই পুরস্কার তুলে দেবেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

প্রতিষ্ঠানের এমডি লোকমান হোসেন বলেন, ‘দায়িত্ব নেয়ার পর প্রতি সেকেন্ডকে গুরুত্বের সঙ্গে কাউন্ট করেছি। বিশ্বে কখনোই কোনো প্রযুক্তির শতভাগ সাপোর্ট পাওয়া যায় না। সিস্টেম লস থাকে। অপারেশন লসও থাকে। কিন্তু এবার লক্ষ্য ছিল, যেহেতু আমাদের মুজিব শতবর্ষ চলছে, স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী চলছে, আমরা একটা কিছু করবোই। আমার টিমের সবার সহায়তায় সেটা সম্ভব হয়েছে।

বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদা ৬৫ লাখ মেট্রিক টন। বিপরীতে ইস্টার্ন রিফাইনারির চালু ১ নম্বর ইউনিটটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার ২৪৫ মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানির জোগান দেয়। বাকি প্রায় ৪৯ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করতে হয় বিপিসিকে।

এ বিভাগের আরো খবর