রাজধানীর আদাবর থেকে নিখোঁজ হওয়া তিন তরুণী তাদের বাবার সঙ্গে থাকতে চান। এ জন্য পালিয়ে যশোরে বাবার কাছে যান তারা। তিনজন পুলিশকে জানান, খালাদের কাছ থেকে তারা প্রত্যাশিত ব্যবহার পাচ্ছিলেন না।
আদাবর থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর শুক্রবার যশোরের হামিদপুর থেকে তিন বোনকে উদ্ধার করে শনিবার সকালে ঢাকায় আনা হয়।
পুলিশ জানায়, ২০১২ সালে বাবা-মা আলাদা হয়ে গেলে তারা মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। ২০১৩ সালে তাদের মা ক্যানসারে মারা যান। তারপর তিন বোন তাদের দুই খালার সঙ্গে থাকছিলেন।
তরুণীদের অভিযোগ, মা মারা যাওয়ার দীর্ঘদিন হলেও তাদের বাবা-চাচাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি এই দীর্ঘ সময় তারা তাদের বাবাকে পর্যন্ত দেখতে পাননি।
শনিবার তাদের ঢাকায় আনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
তিনি বলেন, ‘যশোর কোতোয়ালি থানার সহযোগিতায় তিনজনকে উদ্ধার করে ঢাকায় আনা হয়েছে। তাদের আদালতে নেয়া হবে। তারা কার কাছে থাকতে চান বা তাদের কী দাবি, তা আদালতকে জানাবেন। আদালত যে নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী পুলিশ কাজ করবে।’
তিনি জানান, তিনজনের মধ্যে দুজন এসএসসি পরীক্ষার্থী। আরেকজন ডিপ্লোমা পাস করেছেন। যিনি ডিপ্লোমা করছেন তিনি আদাবরে এক খালার কাছে থাকতেন। বাকি দুজন খিলগাঁওয়ে আরেক খালার কাছে থাকতেন। এসএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে তিন বোন আদাবরে আসেন। সেখানেই তারা পরিকল্পনা করেন বাড়িতে বাবার কাছে পালিয়ে যাওয়ার।
তাদের কাছে কোনো ফোন ছিল না এবং তারা খালার পরিবারে ফোন দিয়ে মাঝেমধ্যে তাদের দাদির সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।
কাউকে কিছু না বলে আদাবরে খালার বাসা থেকে তিন বোন নিখোঁজ হওয়ার পর তাদের খালা ১৮ নভেম্বর আদাবর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। তদন্ত করতে গিয়ে তিন মেয়েকে যশোরের হামিদপুর এলাকায় শনাক্ত করে পুলিশ।
বিপ্লব কুমার বলেন, তিন বোন আদাবরে আসার পর বাবার কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী দাদির সঙ্গে কথা হয়। তাদের কাছে যশোর যাওয়ার জন্য টাকা ছিল না। সে জন্য দাদি ২ হাজার টাকা পাঠান। সেই টাকায় তারা গাবতলী থেকে যশোরে যান।
তিন বোনের টিকটক আসক্তির বিষয়ে খালা সাজিয়া নওশীনের অভিযোগের বিষয়ে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে কোনো মোবাইল ফোন পাইনি। তার খালারা গণমাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা আমরা এখনও পাইনি। তিন বোনের অনেকটাই ক্ষোভ রয়েছে খালাদের ওপর। আরও ভালো থাকতে পারতেন বলে ধারণা তাদের।’
তিন বোনকে শনাক্ত কিংবা উদ্ধার নিয়ে পুলিশ ও র্যাবের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো একটি ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সংস্থাই ছায়া তদন্ত করে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি বিভাগই ভ্রাতৃপ্রতিম। আমাদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টির কোনো কারণ নেই। আমরা যশোর থেকে তিন বোনকে রিকভারি করে রাজধানীতে এনেছি। রিকভারিটাই মূল বিষয়।’