বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জাহাঙ্গীর কি মেয়র পদও হারাতে পারেন

  •    
  • ২০ নভেম্বর, ২০২১ ১০:৫৪

স্থানীয় সরকার আইনে এমন কিছু বিধান আছে, যে কারণে জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। যদি ক্ষমতাসীন দল তার বিরুদ্ধে মামলা করে এবং সে মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়, যদি তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরের সমর্থন হারান এবং তারা যদি অনাস্থা আনে, তাহলে জাহাঙ্গীরের মেয়র থাকা অনিশ্চিত হয়ে যাবে।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির ভিডিও ভাইরাল হওয়ার জেরে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ হারানো জাহাঙ্গীর আলমের মেয়র পদ বাতিলের দাবি তুলছেন তার বিরোধীরা। দল থেকে বহিষ্কারের কারণে নৌকা নিয়ে নির্বাচিত এই নেতা আর পদে থাকতে পারেন না- এমন দাবি তাদের।

তবে দল বহিষ্কার করলে মেয়র পদ যাবে, এমন বিষয় স্থানীয় সরকার আইনে বলা নেই। জাতীয় সংসদেও দেখা গেছে দল থেকে বহিষ্কার করার পরেও একাধিক ব্যক্তি তার সংসদ সদস্য পদ পুরোটা পার করেছেন।

তবে স্থানীয় সরকার আইনে এমন কিছু বিধান আছে, যে কারণে জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। যদি ক্ষমতাসীন দল তার বিরুদ্ধে মামলা করে এবং সে মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়, যদি তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরের সমর্থন হারান এবং তারা যদি অনাস্থা আনে, তাহলে জাহাঙ্গীরের মেয়র থাকা অনিশ্চিত হয়ে যাবে।

আইন করার মধ্য দিয়ে দেশে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন শুরু হয় ২০১৬ সালে। সিদ্ধান্ত হয়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের প্রার্থী দিতে পারবে দলীয় প্রতীকে। সে বিধান অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়। এরপর একে একে দেশের সব সিটি করপোরেশনে দলীয় প্রতীকে ভোট হয়।

২০১৮ সালের ২৭ জুনের ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর।

এই নির্বাচন হয়েছে ২০০৯ সালে প্রণীত স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনে। সেখানে করপোরেশনের মেয়র বা কাউন্সিলরদের যোগ্যতা, অপসারণ বা পদচ্যুতির বিষয়ে নানা শর্তের কথা বলা আছে। তবে দল বহিষ্কার করলে পদ হারাবেন-এমন কোনো কথা বলা নেই।

ক্ষমতাসীন দলের গাজীপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদককে দল থেকে ছেঁটে ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘরোয়া আলোচনায় তিনি বঙ্গবন্ধুর দেশ স্বাধীন করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের শহীদ হওয়ার প্রতিষ্ঠিত তথ্যের সত্যতা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।

বেশ কয়েক বছর আগে রাজধানীতে এক আলোচনায় এমন ধরনের বক্তব্য দেয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখনও সে মামলা চলছে।

ওবায়দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘তার (জাহাঙ্গীর) বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। যেহেতু তার বক্তব্য বঙ্গবন্ধু ও আমাদের ইতিহাসকে কটাক্ষ করে। কাজেই এটা প্রশাসনিকভাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে আজকের দলীয় সিদ্ধান্ত অফিশিয়ালি জানানো হবে।’

ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের সাজা হলে জাতীয় সংসদ সদস্যদের পদ খারিজ হয়। তবে স্থানীয় সরকারের সদস্যদের পদ থেকে বরখাস্ত হতে অভিযোগপত্র দেয়াটাই যথেষ্ট।

তবে স্থানীয় সরকার আইনে বলা আছে, ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করলে সরকার, লিখিত আদেশের মাধ্যমে মেয়র বা কাউন্সিলরকে বরখাস্ত করতে পারবে।

কাজেই ওবায়দুল কাদের যে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন, সেটি যদি নেয়া হয়, এবং যদি তদন্তে প্রমাণ মেলে এবং যদি মেয়রের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হয়, তাহলেই পদ হারানোর প্রসঙ্গটি আসে।

বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলার কথা হয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে। দল বহিষ্কার করায় জাহাঙ্গীরের মেয়র পদে থাকা নিয়ে কোনো সংশয় আছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইনে এ বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা নেই।’

তিনি বলেন, ‘এটা তো আমাদের জন্য নতুন একটা অভিজ্ঞতা। আইনের মধ্যে কিন্তু সুষ্পষ্ট কিছু লেখা নাই। আইনের মধ্যে শুধু লেখা আছে সে যদি ফৌজদারি মামলা, দুর্নীতি বা রাষ্ট্রের ক্ষতি করলে পদ হারাবেন।’

যেসব কারণে মেয়রকে অপসারণ করা যায়

# স্থানীয় সরকার আইনে বলা আছে, মেয়র অথবা কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হবে যদি তিনি যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া সিটি করপোরেশনের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন।

# যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হন।

# যদি তিনি দায়িত্ব পালনে অস্বীকার করেন বা শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন।

# যদি তিনি অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন।

# বার্ষিক ১২টি মাসিক সভার বদলে ন্যুনতম ৯টি সভা গ্রহণযোগ্য কারণ ব্যতীত করতে না পারেন বা সভায় উপস্থিত থাকিতে ব্যর্থ হন।

# এই অপসারণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে তদন্ত করতে হবে এবং অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।

আবার মেয়রকে অপসারণ করা হলে, আদেশের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করিতে পারবেন। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপসারণ আদেশটি স্থগিত থাকবে। রাষ্ট্রপতি অপসারণ আদেশটি পরিবর্তন, বাতিল বা বহাল রাখতে পারবেন।

কাউন্সিলররা অনাস্থা আনলে?

তবে অভিযোগপত্র দেয়া ছাড়া আরও একটি কারণে মেয়রকে অপসারণ করা যায়। যদি কাউন্সিলররা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে এবং সেটি দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে পাস হয় তাহলেও পদ হারাতে পারেন জাহাঙ্গীর।

আইনে বলা আছে, গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে করপোরেশনের মেয়র বা কোনো কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যাবে। তবে এই অনাস্থার প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘ।

অসদাচরণের ব্যাখ্যায় আইনে বলা আছে ক্ষমতার অপব্যবহার, এই আইন অনুযায়ী বিধি-নিষেধ পরিপন্থি কার্যকলাপ, দুর্নীতি, অসদুপায়ে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ, পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, ইচ্ছাকৃত অপশাসন, নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব দাখিল না করা বা অসত্য তথ্য প্রদান।

নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হলে কাউন্সিলরগণের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সই নিয়ে একটি প্রস্তাবের নোটিশ একজন কাউন্সিলরকে দাখিল করতে হবে।

অনাস্থা প্রস্তাব প্রাপ্তির পর এক মাসের মধ্যে অভিযোগের প্রাথমিকভাবে তদন্ত হবে এবং তাতে প্রমাণ পেলে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে।

নোটিশের জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হলে অনধিক ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য কাউন্সিলর সভা ডাকা হবে।

সভায় মোট নির্বাচিত সদস্য সংখ্যার অর্ধেক সদস্য সমন্বয়ে কোরাম হবে। সেখানে অনাস্থা প্রস্তাবটির উপর ভোট হবে গোপন ব্যালটে। প্রস্তাবটি মোট সদস্য সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে গৃহীত হলে সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মেয়র পদ শূন্য বলেয়া ঘোষণা করবে।

এ বিভাগের আরো খবর