বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিশুর মত উপেক্ষা ভবিষ্যৎ সাফল্যে বাধা

  •    
  • ২০ নভেম্বর, ২০২১ ০৮:১৫

সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা যদি পরিবারে শিশুদের মতামত দেয়ার সুযোগ না দিই, তাহলে বড় হয়ে সেও সমাজের নানা ক্ষেত্রে এমন আচরণ করবে। কখনও কখনও তাকে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ারও সুযোগ দিয়ে তাকে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়াটা বোঝাতে হবে। এতে তার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা গড়ে উঠবে। না হলে সব সময় সে বাবা-মায়ের প্রতি নির্ভরশীল থাকবে।’

রাজধানীর এজি চার্চ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে তমজিৎ পাল স্পর্শ। স্পর্শ প্রায়ই অভিযোগ করে, বাবা-মা কখনোই তার কথার গুরুত্ব দেন না, কোনো কথা বললেও শুনতে চান না। কোনো বিষয়ে বললে শুধু বলেন, ‘তোমার এত বুঝে কাজ নেই, শুধু পড়াশোনা করো’।

স্পর্শের কথার সত্যতা পাওয়া যায় তার মা স্বপ্না রানীর কণ্ঠে। কেন শিশুর কথার গুরুত্ব দেয়া হয় না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ও ছোট, অনেক কিছু না বুঝেই বলে। তাই ওর জন্য যা ভালো তাই করি। ও যেহেতু এখনও ছোট, তাই ওর কথার গুরুত্ব দেয়ার কী আছে?’

একই রকম অভিজ্ঞতা দিলু রোডের প্রভাতী উচ্চ বিদ্যানিকেতনের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী তাজিন আহমেদের। বলে, ‘বাবা-মা শুধু এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না বলে। আর আমি যা-ই বলি শুধু নিষেধ করে। কোনো কিছু বললেও শুনতেই চায় না।’

তাজিনের কথার সূত্র ধরে জানতে চাইলে তার মা বিলকিস আহমেদ বলেন, ‘মেয়ে ছোট, তাই ও এখনও কোনটা ভালো কোনটা খারাপ তা বুঝতে শেখেনি। এ জন্য সব সময় ওকে গাইড করি।’

কোনো সিদ্ধান্তে তাজিনের কথার বা মতামতের গুরুত্ব দেয়া হয় কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আগে ও বড় হোক, তারপর ওর কথার গুরুত্ব দেব।’

মগবাজারের ইস্পাহানী গ্লার্লস স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মিম রহমানেরও অভিজ্ঞতাও একই রকম। বলে, ‘আমি কোনো কিছু বললে বাবা-মা শুধু বলেন, তুমি ছোট, এত বেশি বুঝতে যেও না। যা বলছি তা-ই করো।’

স্পর্শ, তাজিন, মিমের মতো বাংলাদেশের বেশির ভাগ পরিবারেই নেই শিশুর কথার গুরুত্ব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবারে শিশুর মতামতের গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

এমন বাস্তবতায় ২০ নভেম্বর পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘এ বেটার ফিউচার ফর এভরি চাইল্ড (প্রতিটি শিশুর জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ)।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মতে, বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ শিশু। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরের ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৮২ লাখ। সেই হিসাবে বাংলাদেশে শিশুর সংখ্যা ৬ কোটি ৭২ লাখ।

কেন পরিবারে শিশুর মতামতের গুরত্ব দেয়া হয় না, এমন প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক (শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমাদের ধারণা, শিশুর যেহেতু বয়স, ওজন এবং উচ্চতা কম, তাই তার অধিকারও কম। এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে, যা কাম্য নয়। কেননা বড়দের মতো শিশুদেরও সিদ্ধান্তে মতামত দেয়ার অধিকার আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন শিশুদের মতামত নেয়া মানেই হলো শিশুর সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া। বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। সিদ্ধান্ত আপনিই নেবেন, তবে তা শিশুর সঙ্গে আলাপ করে। তার মতে, তার সঙ্গে আপনার মিল না হলে যুক্তিসহকারে তাকে বুঝিয়ে দিলেই হয়।’

শিশুর মতামতের গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। বলেন, ‘আমরা যদি পরিবারে শিশুদের মতামত দেয়ার সুযোগ না দিই, তাহলে বড় হয়ে সেও সমাজের নানা ক্ষেত্রে এমন আচরণ করবে। কখনও কখনও তাকে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ারও সুযোগ দিয়ে তাকে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়াটা বোঝাতে হবে। এতে তার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা গড়ে উঠবে। না হলে সব সময় সে বাবা-মায়ের প্রতি নির্ভরশীল থাকবে।’

একই কথা বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন রাশেদা ইরশাদ নাসির। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামাজিক সংস্কৃতির কারণেই পরিবারগুলোতে শিশুর মতামতের গুরুত্ব দেয়া হয় না। যা ঠিক নয়। পরিবারের শিশুর মতামতের গুরুত্ব দিলে পরে সেও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের মতামতের গুরুত্ব দেবে।’

পরিবারে শিশুর মতামতের গুরুত্ব না দিলে তার মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারন মাহফুজা খানম।

তিনি বলেন, ‘পরিবারে শিশুর মতামতের গুরুত্ব দেয়া উচিত। না হলে এর প্রভাব পড়বে তার মানসিক বিকাশে। এর উদাহরণ হতে পারে বড় হয়েও শিশু সুলভ আচরণ, সিদ্ধান্ত নিতে না পারা ইত্যাদি।’

এ বিভাগের আরো খবর