১১ বছর আগে রাজশাহীতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহিলা ও শিশু-কিশোরী সেফ হোমে আসেন অন্তরা বেগম ও শিরিনা খাতুন।
শুক্রবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নতুন জীবন শুরু করেছেন এই দুই নারী। এদিন তাদের বিয়ের আয়োজনে সেজেছিল সেফ হোম। শিরিনা ও অন্তরাকে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির হয়েছিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সরকারি কর্মকর্তারা।
সেফ হোমের উপতত্ত্বাবধায়ক লাইজু রাজ্জাক জানান, ২০১০ সালে রংপুর আদালতের মাধ্যমে শিরিনা খাতুনকে রাজশাহী সেফ হোমে পাঠানো হয়েছিল। একই বছর অন্তরা বেগমকেও পঞ্চগড় আদালতের মাধ্যমে সেফ হোমে পাঠানো হয়। ঠিকানা বলতে না পারায় তাদের পরিবারের কাছে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
তিনি জানান, দুই নারীর বিয়ের জন্য এলাকায় ঘটক পাঠানো হয়। দেখতে দেখতে দুজন পাত্রও পেয়ে যান। দেখাশোনার পর দুই মেয়ে তাদের বিয়ে করতে রাজি হন।
শিরিনার সঙ্গে ইসমাইল হোসেনের এবং অন্তরা বেগমের সঙ্গে মো. বিপ্লবের বিয়ে ঠিক হয়। এরপর তিনি বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং কমিটির সভায় তোলেন। কমিটির সভাপতি রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আবদুল জলিল যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ের ব্যবস্থা করার অনুমতি দেন।
লাইজু রাজ্জাক জানান, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্য রংপুর ও পঞ্চগড় আদালতে যেতে হয়। বিয়ের জন্য ওই নারীদের নিজ জিম্মায় আদালত থেকে জামিন নিতে হয়। দুই আদালতেই আইনজীবী নিয়োগ করতে হয়। এসব করতে প্রায় এক মাস লেগে যায়। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুক্রবার সেফ হোমে আয়োজন করা হয় বিয়ের।
অন্তরাকে বিয়ে করেছেন রাজশাহী নগরীর বড় বনগ্রাম দুরুলের মোড় এলাকার মো. বিপ্লব। শিরিনাকে বিয়ে করেছেন পবার পিল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। দুজনেরই স্ত্রী মারা যাওয়ায় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করলেন।
ইসমাইল হোসেনের বিয়েতে তার দুই ছেলের বউ জয়া বেগম ও দিলরুবা বেগম ছেলে-মেয়ে নিয়ে এসেছিলেন। অন্তরা বেগমের বর বিপ্লবের বাড়ি রাজশাহী নগরের বড় বনগ্রাম দুরুলের মোড়ে। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা এসেছিলেন বাবার সঙ্গে। বাবার পাশেই বসে ছিলেন।
লাইজু রাজ্জাক বলেন, ‘মেয়ে দুটি নিজের সংসারে সুখে থাকবে এই আমার আনন্দ।’
জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘অভিভাবকহীন দুই নারীর বিয়ে দিতে পেরে আমি খুশি। বিয়েতে দুই পক্ষের অতিথিসহ প্রায় ৩০০ মানুষকে দাওয়াত করা হয়েছিল।
এই বিয়েতে অতিথি হিসেবে আরও এসেছিলেন রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) এ বি এম মাসুদ হোসেন, পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লসমী চাকমা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীন, রাজশাহী সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোছা. হাসিনা মমতাজ, সহকারী পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল ফিরোজসহ অনেকে। এ ছাড়া দুই বরের পক্ষ থেকে বরযাত্রী এসেছিলেন আরও প্রায় ৪০ জন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বাবুর্চি আকবর হোসেন জানান, অতিথিদের জন্য তিনি ৪৫ কেজি খাসির মাংস, ২০ কেজি মাছ, ২২ কেজি চালের পোলাও ও পাঁচ কেজি চালের সাদা ভাত রান্না করেছিলেন।