আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে কিছু মানুষ বৈঠক করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়ন করেছে, বাংলাদেশের মানুষ এখন দুবেলা পেট ভরে খেতে পারছে। ক্ষুধার্ত মানুষগুলোকে দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা আনতে পারছে না- এটাই তাদের দুঃখ?’
দেশে ব্যাপক উন্নয়নের পরও যারা দেশ-বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সচেতন করতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে, আমরা দেখি তাদের, যারা হাজার হাজার অপরাধ করলেও তা অপরাধ হিসেবে দেখে না। তাদের প্রতি দরদ যেন উথলে পড়ে। অথচ দুর্নীতি করে যারা সাজাপ্রাপ্ত, তাদের পক্ষে কথা বলে।
‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার। কিন্তু যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত এবং যারা দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে একটি কথাও নেই। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে যে সাজাপ্রাপ্ত হয়, তার জন্য তাদের মায়াকান্না। একটা অদ্ভুত অবস্থা আমরা দেখি। আর সব দোষ তো আওয়ামী লীগের।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশজুড়ে এত উন্নয়নের পরও কিছু লোক বিদেশে বসে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আবার জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। এদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন হতে হবে।’
শারদীয় দুর্গাপূজার সময় ঘটে যাওয়া সহিংসতা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের কাজগুলো প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হয়। এই যে মসজিদ থেকে কোরআন শরিফ নিয়ে হনুমানের পায়ে রেখে গদাটা নিয়ে চলে গেল। একজন মুসলমান হয়ে কীভাবে কোরআন শরিফ অবমাননা করে? যে কোরআন শরিফটা নিয়ে হনুমানের পায়ে রেখেছে, সে কি কম দোষী। সে-ই তো কোরআন শরিফের অবমাননা করেছে।’
দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতেই এমন ঘটনা হয়েছে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সময়মতো পদক্ষেপ নিয়ে আমরা সব নিয়ন্ত্রণ করেছি। এর পেছনে কারা সেটাও বের হয়েছে। মামলা চলছে তাই সব বলব না। সব তথ্য কিন্তু আমি জানি।’
আওয়ামী লীগপ্রধান বলেন, ‘যে কেউ দল করতে পারবেন। কাউকে বাধা দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। মিছিল করতে চাচ্ছে মিছিল করুক। কিন্তু মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারবে না। মানুষের জানমালের ক্ষতি করতে পারবে না।
‘জনগণই আওয়ামী লীগের শক্তি। আমরা জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে মযাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছে গেছে। উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছে। আমাদের উন্নয়নটা হলো একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত।’
বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে দলটি পলাতক আসামির নেতৃত্বে চলে, তাদের জনগণ ভোট দেবে না বলে আমার বিশ্বাস।
‘বিএনপিকে কোন আশায় মানুষ ভোট দেবে? পলাতক আসামি যে দল চালায় জনগণ তাদের কী আশায় ভোট দেবে? এরা দেশের গরিবের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। বিদেশে বসে আরাম-আয়েশে আছে। তাদের এই আয়ের উৎস কী?’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে তার রাজনৈতিক জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত। তাকে হত্যাচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সব সময়ের টার্গেট আমি। আমার বিষয়ে বলেছিল শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনো দিন হতে পারবে না। তারপরই কিন্তু বোমা পোঁতা হলো কোটালিপাড়ায়। অতীতে তার বক্তব্য ছিল, শত বছরেও আওয়ামী লীগ কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এরপরই কিন্তু গ্রেনেড হামলা।
‘আমার মনে হয়, এ কথাগুলো আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের খুব কমই নেতা-কর্মী আছে যারা এদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়নি।’
আওয়ামী লীগ প্রতিশোধপরায়ণ রাজনীতি করে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রতি অত্যাচার-নির্যাতন বা কোনো রকম বাধা দেয়নি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, জনগণের ভোটে বিশ্বাস করি।’
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও সরকারের সফলতাও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘করোনা ভ্যাকসিন আমরা বিনা পয়সায় দিচ্ছি। বহু উন্নত দেশ কিন্তু বিনা পয়সায় দেয় না। টেস্ট করানো হচ্ছে তাও বিনা পয়সায়। এ জন্য আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছি। মানুষকে বাঁচানোর সব ব্যবস্থা আমরা করছি।’
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে ৯৯ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পেয়েছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। তা নিয়েও কম সমালোচনা নেই।
‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অযথা অহেতুক নানা অপপ্রচার করে, এমনকি আমাদের উন্নয়নশীল দেশ হওয়াটাও সঠিক নয় বলে অপপ্রচার করেছে আমাদের দেশের কিছু মানুষ। এটা হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক। এরা কারা, এদের উদ্দেশ্যটা কী? এরা কী চায়? আমি মনে করি, এ বিষয়ে আমাদের সবার জানতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে। যা যা করণীয় তা করতে হবে।’
বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের উন্নয়নকে ‘বিস্ময়’ বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করে কীভাবে হলো? অনেক রাষ্ট্রপ্রধান আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, এর ম্যাজিকটা কী? আমি বলেছি ম্যাজিক কিছু না, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণেই এই উন্নয়ন করতে পেরেছি।’