বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বন ধ্বংস বন্ধে অঙ্গীকারের মধ্যেই ব্রাজিলে আমাজন বন উজাড় সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছানোর কথা জানিয়েছে দেশটির সরকারি সংস্থা দি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (এনআইএসআর)।
বৃহস্পতিবার তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত আমাজনের বনের ২২ শতাংশ উজাড় হয়েছে, যা গত ১৫ বছরে সর্বোচ্চ। এসময়ে ১৩ হাজার ২৩৫ বর্গকিলোমিটার বন উজাড় হয়েছে আমাজনে। চলতি বছরের তথ্যেও এই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
শুক্রবার জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ক্ষমতায় আসার পর আমাজনে কথিত উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জের বলসোনারো। বন উজাড় করে কৃষিভূমি তৈরি ও শিল্পায়নের উদ্যোগ নেয় তার প্রশাসন। বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আমাজনের ভূমি তুলে দিতে পরিবেশ আইনও বদলানো হয়। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বনটির ভূমির ওপরে আমাজনের আদিবাসীদের প্রথাগত অধিকার।
ব্রাজিলে আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের নির্বাহী পরিচালক মাউরিচিও ভোইভোডিক বলেন, ‘এই হলো বাস্তবতা অবস্থা যা বিশ্বের কাছে মুখরোচক বক্তব্য ও পরিবেশ রক্ষার ভান করে আড়াল করতে চায় বলসোনারোর সরকার। পরিস্থিতি বলছে, আমাজনের ধ্বংসের গতি বাড়িয়েছেন বলসোনারো।’
২০১৯ সালের জানুয়ারি বলসোনারো ক্ষমতা নেয়ার আগের এক যুগে কোনো বছরই ব্রাজিলে আমাজনের ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি বন ধ্বংস হয়নি।
২০৩০ সালের মধ্যে বন ধ্বংস বন্ধে ঐক্যের ঘোষণা দিয়েছেন শতাধিক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। বনায়নে গতি আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান ২৬তম জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে ২ নভেম্বর এ ঘোষণা দেন বিশ্বনেতারা। একে আখ্যায়িত করা হচ্ছে ‘বন ও ভূমি ব্যবহারে গ্লাসগো নেতাদের ঘোষণাপত্র’ হিসেবে।
জলবায়ুবিষয়ক এ বছরের সম্মেলনে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটিতে সই করেছে ১০০টির বেশি দেশ। বনাঞ্চল ধ্বংসে সমালোচিত ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়াও চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।
গত দুই বছরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ চিরহরিৎ বনাঞ্চল আমাজনের বড় অংশ আগুনে পুড়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে বারবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে ব্রাজিল; পরিবেশবিদদের ব্যাপক তোপের মুখে পড়েছে বলসোনারোর বাণিজ্যবান্ধব সরকার।