জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বেপরোয়া আচরণের অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার হাফ ভাড়া নিয়ে বিহঙ্গ পরিবহনের সঙ্গে গোলযোগ সৃষ্টি হলে সেখানে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ছাড়াও এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও তার বুকে পা চেপে ধরার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এর আগেও বিভিন্ন সময় নাহিদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থীদের হয়রানি, মারধর এবং কলার ধরে গাড়িতে তোলার অভিযোগ আছে। জবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এমএম শরিফুল ইসলামের ছোট ভাই হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হয়রানি করেন তিনি।
বুধবারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একটি বাসের গ্লাস ভাঙার সময় পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে ছাত্ররা ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে ক্যাম্পাসের দিকে চলে আসতে শুরু করে। এ সময় দৌড়ে ক্যাম্পাসে আসার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক শিক্ষার্থী রাস্তায় পড়ে গেলে তাকে আটক করেন নাহিদ। পরে সেই শিক্ষার্থীকে মারধর এবং বুকে পা চেপে ধরেন।’
শিক্ষার্থীরা জানান, ওই শিক্ষার্থীকে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে নিয়ে যান নাহিদ। পরে তাকে কোতোয়ালি থানার হাজতে রাখা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। তারা সড়ক অবরোধ করে নাহিদের প্রত্যাহার চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় আটক ওই শিক্ষার্থীকে মুক্ত করা হয়। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডির অনুরোধে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসআই নাহিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের দোকান ও সদরঘাট বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলেন। অনেকের কাছে তিনি নিজেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী পরিচয়ও দেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন জবির মার্কেটিং বিভাগের সাবেক এমএলএসএস।
নাহিদের চাঁদাবাজির শিকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বাসের ম্যানেজার বলেন, ‘আমাদের প্রায় সব গাড়ির কাছেই এসআই নাহিদ নিজেকে জগন্নাথের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিয়ে টাকা নেন। আমরাও বাধ্য হয়ে দেই। তার নিজেরও ৪টি বাস এখানে আছে। এ ছাড়া গতকাল যে বাসের সঙ্গে সমস্যা হয়েছে সেটি তার ভাইয়ের। তারা দুই ভাই মিলে সদরঘাট বাস টার্মিনালকে চাঁদাবাজির রাজ্যে পরিণত করেছেন। কিছু বললেই নানাভাবে মামলা ও হয়রানির ভয় দেখান।’
নাহিদের হয়রানির শিকার সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা কয়েকজন মিলে ক্যাম্পাসের পাশে বসেছিলাম। হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের ওপর নাহিদ চড়াও হন এবং কলার ধরে পুলিশের গাড়িতে ওঠান। এ সময় তিনি আমার এক বন্ধুকে চড়-থাপ্পড়ও দেন। তার এ ধরনের আচরণের কারণ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা তার ভাইয়ের বিপরীতে রাজনীতি করতাম।’
সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাইলে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার আপন বড় ভাই শরিফুল ইসলাম। তবে আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম এমন পরিচয় দিই না। তা ছাড়া আমি কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করি না।’
শিক্ষার্থীকে মারধর ও আটক করে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘লালবাগ জোনের ডিসিকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। আমাদের একজন ছাত্রের গায়ে পুলিশ কোনোভাবেই হাত তুলতে পারে না। আর হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ অন্যায় কাজ করেছে সেটাও জানিয়েছি। আমাদের যে জানানো হয়নি সেটাও আমরা ডিসিকে জানিয়েছি। উনি বলেছেন, বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
প্রক্টর আরও বলেন, ‘পুলিশ ফাঁড়ি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য, শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার জন্য নয়।’