বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গণশৌচাগারের জন্য বাজেট আছে, জায়গা নেই

  •    
  • ১৯ নভেম্বর, ২০২১ ১০:৩০

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের এক কাঠা জমিও নেই। ঢাকার জমি হচ্ছে রেলওয়ের, রাজউকের, পিডব্লিউডি বা বিভিন্ন ডেভেলপারের। বিভিন্ন ল্যান্ড ডেভেলপার বা দোকান মালিকদের বলব, যদি জায়গা দেন, তাহলে আমরা টয়লেট করে দিতে পারি।’

২ কোটি লোকের শহর ঢাকায় গণশৌচাগারের সংখ্যা মাত্র ১০৭টি। এর বেশির ভাগই কয়েক বছর আগে উদ্যোগ নিয়ে বানানো। অনেক স্থানে পার্ক বা ফুটপাতকে পথচারীরা বানিয়ে ফেলেছেন অস্থায়ী শৌচাগার। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনই বলছে, গণশৌচাগারের সংখ্যা তারা বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের হাতে বাজেট আছে। কিন্তু সমস্যা জায়গা নিয়ে। শৌচাগার তৈরির জায়গা পাওয়া কঠিন।

রাজধানীতে এখন প্রতি ২ লাখ লোকের জন্য একটি করে গণশৌচাগার।

যে অল্প কিছু গণশৌচাগার দেখা যায়, সেগুলো নতুন হওয়ায় ব্যবস্থাপনা ভালো। শৌচাগারের ভেতরে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে। কয়েকটিতে রয়েছে প্রতিবন্ধীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা। সঙ্গে থাকা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস লকারে রেখে শৌচাগার ব্যবহার করা যায়।

নগর কর্তৃপক্ষ যেসব নতুন শৌচাগার স্থাপন করতে যাচ্ছে, সেগুলোয় তারা নতুন আরও কিছু সেবা যোগ করতে চায়। সেখানে বেবি ফিডিং জোন থাকবে। নারীরা সেখানে বাচ্চাদের দুধ খাওয়াতে পারবেন। পাশাপাশি ছোট বাচ্চাদের রেখে টয়লেটে যাওয়ার জন্য একটি কিডস জোন থাকবে।

রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পান্থকুঞ্জ পার্ক পাবলিক টয়লেটে গিয়ে দেখা যায়, এখানে নারী-পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, তবে খাবার পানির যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেটা নষ্ট হয়ে আছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কের গণশৌচাগারে কাজ করছেন দুজন। ছবি: নিউজবাংলা

টয়লেট ব্যবস্থাপনার জন্য টোল নেয়া হয়। এটির তত্ত্বাবধায়ক মো. শাহীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টয়লেট ও প্রসাবের জন্য আমরা পাঁচ টাকা করে নেই, গোসলের জন্য নেয়া হয় ১০ টাকা। এ ছাড়া লকারের জন্য পাঁচ টাকা নেয়া হয়। টিস্যু ও হ্যান্ডওয়াশ আমরাই দেই। প্রতিবন্ধী ও গরিব মানুষের জন্য সেবা ফ্রি।’

তিনি জানান, এখানে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ পুরুষ এবং ৫০ থেকে ৬০ জন নারী টয়লেট সেবা নেন। সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই টয়লেট খোলা থাকে। দুই শিফটে তারা দুজন দেখাশোনা করেন। কিছুক্ষণ পর পর তারা এয়ার স্প্রে করেন।

পথচারী ইউসুফ আলি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের টয়লেটগুলোর মান ভালো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তবে শহরে টয়লেটের সংখ্যা কম। সংখ্যা বাড়ানো গেলে শহরের পরিবেশ ভালো হতো। মানুষ রাস্তা নোংরা করত না।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বর্তমানে গণশৌচাগারের সংখ্যা ৫৬টি। এর ১৯টিই বন্ধ আছে সংস্কারের জন্য। অঞ্চল-৬ থেকে অঞ্চল-১০ পর্যন্ত ৫টি অঞ্চলে কোনো গণশৌচাগার নেই।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের বলেন, তারা আরও ১৬টি গণশৌচাগার স্থাপনের পরিকল্পনা করেছেন, যেগুলোয় আধুনিক সেবা থাকবে। তবে তাদের লক্ষ্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটা করে গণশৌচাগার নির্মাণ। সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে তারা জায়গা দেয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। জেলা প্রশাসন, রাজউক ও রেলওয়েকে অনুরোধ করা হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ডের গণশৌচাগার চালু হয় ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। ভেতরে পুরুষদের জন্য একটি গোসলখানা, দুটি টয়লেট, দুটি প্রস্রাবখানা। নারীদের জন্য একটি গোসলখানা ও দুটি টয়লেট। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, গণশৌচাগার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।

পথচারী মো. তারেক বলেন, ‘প্রস্রাবের গন্ধে রাস্তায় হাঁটা যায় না। এ রকম টয়লেটের সংখ্যা বাড়ালে শহরের রাস্তাঘাট অনেক পরিষ্কার হয়ে যেত।’

এই গণশৌচাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. শাওন বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন ২০০-এর বেশি লোক আসে। আমরা টয়লেট পরিষ্কার রাখি নিয়ম করে। টয়লেট কখনও নোংরা হতে দেই না।’

উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফ বলেন, ‘আগে যে অল্প কয়েকটি গণশৌচাগার ছিল, সেগুলোর অবস্থা ছিল খুব খারাপ। ২০০৯ সাল থেকে নতুন করে গণশৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। ২০১১ সালে প্রথমটি তৈরি করা হয় গাবতলীতে। শুরুর দিকে যারা এগুলো লিজ নিত, তারা সব সেবা দিত পারত না। এখন একটা কমিটির মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এনজিওর মাধ্যমে ক্লিনিং কোম্পানিকে যুক্ত করে এটা মেইনটেইন করা হয়।

‘এগুলো থেকে যে সার্ভিস চার্জ পাওয়া যায়, তা আলাদা একটি অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। এই টাকা খরচ করা হয় একটি কমিটির মাধ্যমে। টয়লেটকে ব্যবসা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটি একটি পাবলিক সার্ভিস।’

গণশৌচাগারের সংখ্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের আপাতত টার্গেট আরও ৭৩টি গণশৌচাগার তৈরি করা। এখন ছয়টার মতো নির্মাণাধীন রয়েছে। ২৩টার নির্মাণকাজ শেষ, শুধু হস্তান্তরের অপেক্ষা। ২৮টি গণশৌচাগার এখন সচল আছে।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের জায়গার সমস্যা রয়েছে, সে কারণে বিভিন্ন এজেন্সিকে আমরা চিঠি দিচ্ছি। জায়গার অভাবে যেখানে টয়লেট নির্মাণ করা যাচ্ছে না, সেখানে কন্টেইনার দিয়ে ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা করা হবে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের এক কাঠা জমিও নেই। ঢাকার জমি হচ্ছে রেলওয়ের, রাজউকের, পিডব্লিউডি বা বিভিন্ন ডেভেলপারের। বিভিন্ন ল্যান্ড ডেভেলপার বা দোকান মালিকদের বলব, যদি জায়গা দেন, তাহলে আমরা টয়লেট করে দিতে পারি। টয়লেট করার জন্য আমার কাছে এখনো ফান্ড আছে, আরও ৩৫টি টয়লেট আমি করতে পারব।’

বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষের জন্য গণশৌচাগারের ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষের জন্য কন্টেইনারে ভ্রাম্যমাণ টয়লেট নির্মাণ করতে চায় সিটি করপোরেশন। এটা সহজেই শিফট করা যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর