শরীয়তপুরে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা ও তার দুই ভাইয়ের ওপর হামলার ঘটনায় মামলার পর এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে তাদের পরিবার।
মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার মূল আসামি বাচ্চু ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিবেদনে আহতের শরীরে বুলেটের চিহ্ন পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। মামলা এবং আহত জাকিরের ভাইরাল হওয়া ভিডিও বার্তায়ও পিস্তলের কথা বলা হয়েছে। তবে এখনও উদ্ধার হয়নি কোনো আগ্নেয়াস্ত্র।
এমন অবস্থায় নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়েছে আহত আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেনের পরিবার। তাদের অভিযোগ, মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। উল্টো আসামিরা প্রতিনিয়ত তাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
শরীয়তপুরে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাতে শরীয়তপুর শহরের ডাকবাংলো এলাকায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সদস্য জাকির হোসেন কোতোয়াল ও তার ভাই মনির হোসেন কোতোয়ালকে কুপিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষ। গুলি করার অভিযোগও করেছে তাদের পরিবার।
হামলায় গুরুতর আহত জাকির ও তার ভাই মনিরকে রাতেই শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাদের ঢাকা মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়।
এ ঘটনায় পালং মডেল থানায় আটজনকে আসামি করে মামলা হয়। তাদের মধ্যে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
হামলার পর আহত অবস্থায় শরীয়তপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাচ্চু ব্যাপারী ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে একটি ভিডিও বার্তা দেন আওয়ামী লীগ নেতা জাকির। জাকিরকে ঢাকায় নেয়ার পথে স্বজনদের করা ৩ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার তুলাসার ইউনিয়ন পরিষদের ভোট হয় ১১ নভেম্বর। সেই নির্বাচনে জাকির কোতোয়ালের পরিবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে। এর জের ধরে শরীয়তপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাচ্চু ব্যাপারী ও তার সমর্থকরা ১৪ নভেম্বর জাকিরের ভাই মেহেদী হোসেনকে কুপিয়ে আহত করেন।
সেই ঘটনায় জাকির মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মামলা করার জন্য পালং মডেল থানায় যান। খবর পেয়ে বাচ্চু ব্যাপারীর লোকজন শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। থানা থেকে বের হয়ে মামলার কপি ফটোকপি করতে জাকির ও তার ভাই মনির শহরের ডাকবাংলা এলাকায় আসেন। সেখানে বাচ্চু ও তার সমর্থকরা দুই ভাইয়ের ওপর হামলা করে কুপিয়ে ও গুলি করে আহত করেন।
এ ঘটনায় হওয়া মঙ্গলবার রাতেই মামলা হয়। মামলার আট আসামি হলেন বাচ্চু ব্যাপারী, তার ভাই চুন্নু ব্যাপারী, আবু বকর ব্যাপারী, দ্বীন মোহাম্মদ প্রকাশ, রাসেল তালুকদার, শরীফ বাবু, আব্বাস ব্যাপারী ও জুয়েল কাজী।
মামলার পর রাতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আব্বাস ব্যাপারী ও জুয়েল কাজীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জাকিরের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমরা নৌকার নির্বাচন করছি। এইয়ার লিগ্যা আমার তিনডা ছেলেরে কোপাইছে। জাকিররে দুইডা গুলডি করছে বাচ্চু। আমি বাদী অইয়া মামলা করছি। মামলা করার পর থেইকা আসামিগুলো সব ঘুইরা বেড়াইতাছে, পুলিশে কিছু কইতাছে না। ধরতাছে না।
‘আমার বাড়িতে হামলা দিতাছে। আমার আরও এক ছেলে বাসায় আছে, হ্যারে লইয়া আতঙ্কে থাকতাছি। হেরা কইয়া বেড়াই আমার বাড়িতে হামলা দিব, লুট করব। এইডা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই।’
তবে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, ‘জাকিরের পরিবারের লোকজন ভয় বা আতঙ্কে আছে এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। ঘটনার পর আমি হাসপাতালে গিয়েছি, কিন্তু গুলির কোনো আলামত দেখিনি।
‘এখন পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো আলামত পাইনি। তদন্ত চলছে, যদি এমন কোনো আলামত পাই, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’