পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দিতে বিএনপির দুই নেতার নাম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে পাঠানো তিনজনের নামের তালিকায় প্রথমে রয়েছে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মকবুলের হোসেনের নাম; বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির কেরামত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোতালেব হাওলাদার। এ নিয়ে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ-হতাশা।বিএনপি নেতার নাম তালিকায় রাখার প্রতিবাদে কলাপাড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির কেরামতের স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম। অপরদিকে বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা দাবি করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার ছেলে ফেরদৌস হাওলাদার।
কলাপাড়া প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন হোসনেয়ারা বেগম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘২০০৫ সালে চাকামইয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ছিলেন মকবুল হোসেন দফাদার। জিয়াউর রহমানের ৩১তম শাহাদতবার্ষিকীর বিশেষ স্মরণিকায় মকবুলের ছবিসহ শুভেচ্ছা বাণী রয়েছে।
‘২০১২ সালে একটি মেজবান অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের ত্যাগী নেতা বনে যান এই বিএনপি নেতা। এর পুরস্কার হিসেবে ২০১৩ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটিতে সহসভাপতি হিসেবে স্থান পান মকবুল হোসেন।’
হোসনেয়ারা বেগম আরও বলেন, ‘কাউন্সিল ছাড়া তৎকালীন স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশে ওই কমিটিতে সহসভাপতির পদ পান মকবুল। চাকামইয়া ইউনিয়ন বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তাই তৃণমূলের ভোটে বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি হুমায়ুন কবির কেরামতকে দ্বিতীয় স্থানে রাখা হয়েছে।’
এ কারণে এলাকায় ত্যাগী নেতাদের ক্ষোভ বাড়ছে বলে জানান হোসনেয়ারা।এ বিষয়ে মকবুল হোসেন জানান, বিএনপির যে কমিটি ও স্মরণিকায় তার নাম ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন।
মকবুল হোসেনের বিএনপি করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ বি এম মোশাররফ হোসেন।
তিনি জানান, ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত ওই ইউনিয়নে মকবুল হোসেনের মতো বিএনপির একনিষ্ঠ ত্যাগী নেতা ছিলেন না বললেই চলে। উপজেলা বিএনপির সব কর্মকাণ্ডে ওই ইউনিয়ন থেকে মকবুল হোসেন সক্রিয় ছিলেন। তারপর হঠাৎ করে ২০১২ সালের দিকে তিনি বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
উপজেলা বিএনপির সভাপতির মন্তব্যের জবাবে মকবুল বলেন, ‘সেটা তার বিষয়।’ এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব তালুকদার জানান, মকবুল হোসেন দফাদার একসময়ে বিএনপি করতেন। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূলের ভোটে প্রথম হওয়ায় তার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, দলীয় কাউন্সিলে মকবুল হোসেন পেয়েছেন ২৭ ভোট, হুমায়ুন কবির কেরামত ২১ ভোট, মোতালেব হাওলাদার ৮ ভোট এবং মজিবুর রহমান চুন্নু পেয়েছেন ১ ভোট। এখন মনোনয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন দলীয় প্রধান।
হাইব্রিড নয়, মকবুল হোসেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা দাবি করে বুধবার সকালে কলাপাড়া প্রেস ক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন তার ছেলে ফেরদৌস হাওলাদার। লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, তার বাবাকে যারা হাইব্রিড বলছেন, তারাই দল থেকে বহিষ্কৃত। ভিজিএফের চাল আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। কোনো উপায় না পেয়ে তারা মিথ্যা অভিযোগ আনছেন।
তিনি আশা করেন, তার বাবাকে প্রধানমন্ত্রী নৌকা প্রতীক দিয়ে এলাকার উন্নয়ন করার সুযোগ দেবেন।