এবার বিদেশের আদলে কফি শপসহ ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। প্রস্তাবিত এই কফি শপসহ ওভারব্রিজ তৈরি করা হবে হাতিরঝিল ও ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝের সড়কের উপর।
রাজধানীর হোটেল রেডিসনে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান উত্তর ঢাকার মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা হাতিরঝিল ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে একটি ফুটওভার ব্রিজ করছি। আমরা বিভিন্ন দেশে দেখেছি ফুটওভার ব্রিজে কফি শপ থাকে। আমরা এটি চওড়া করে করছি। এখানে কিন্তু কফি শপও থাকবে।
‘যারা শপ করবে, তারাই এটি মেইনটেইন করবে। এটার নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো দেশে এমন কিছু হতে যাচ্ছে। যদি সাসটেইনেবল না হয়, তাহলে কিন্তু কিছু টিকবে না। এরকমই কিছু একটা করতে যাচ্ছি।’
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে উত্তর সিটির সব এলাকা নিয়ে একটি ইমারজেন্সি অপারেটিং সেন্টার চালু করা হবে বলেও জানান মেয়র। তিনি বলেন, ‘যে কয়টা টয়লেট আমরা করেছি সিটি করপোরেশন থেকে, তাতে আমরা সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছি। ঢাকা উত্তরের সেকেন্ড ফ্লোরে জানুয়ারি থেকে আপনারা দেখবেন আমাদের যতগুলো সিটি ক্যামেরা আছে, সেটা পার্কে থাকুক বা টয়লেটে থাকুক অথবা যে কোনো জায়গায়।
‘বিভিন্ন খালেও কিন্তু এখন সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো শুরু করেছি। মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটির খাল পরিষ্কার করার পর সেখানে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে, এখন কিন্তু কেউ ময়লা ফেলে না। কারণ জানে, ক্যামেরা থাকলে যেই হোক না কেন, তাকে নিয়ে আসব আইনের আওতায়।
‘আমরা ইমারজেন্সি অপারেটিং সেন্টার ফেব্রুয়ারিতে খুলে ফেলছি। সব সিসিটিভি ক্যামেরার মধ্যে চলে আসবে।’
উত্তর ঢাকার অভিজাত এলাকার বেশিরভাগ বাড়িতেই মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি বলে আক্ষেপ করেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘বনানী, গুলশান ও বারিধারা লেকে আমি কোনো মাছ ছাড়তে পারি না। যখন এটা করতে পারি না, তখন ওই লেকগুলোতে মশা জন্ম হয়। এখানে পানি তো স্থির, দুর্গন্ধ, মশা তো হবেই।
‘আমি তখন ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের সাথে কথা বললাম, যে কেন এখানে মাছ ছাড়া যাচ্ছে না। তখন বলা হলো, যে ধরনের অ্যামোনিয়া এখানে আছে, বা যে মানব বর্জ্য থেকে যে ধরনের কেমিক্যাল এখানে তৈরি হচ্ছে, তাতে এ সমস্যা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোন জায়গাটায় বসে আছি? এখানে একটি ফ্ল্যাটের দাম ৫০ কোটি টাকার নিচে না, যে এলাকায় এক কাঠা জমির দাম ১০ কোটি টাকা, সেখানে তাদের মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা হচ্ছে এই লেকের ভেতরে। এর কারণ তখন দেখলাম, ৮০ ভাগ যে মানববর্জ্য অপসারণের লাইন রয়েছে, সেগুলোর সরাসরি সংযোগ হয় খালে, না হয় লেকে, না হয় নদীতে।
‘এটি হচ্ছে বাস্তব চিত্র। এতে এখানে কোনো পরিষ্কার পানি হচ্ছে না। আমরা কোনো ওয়াটার প্ল্যান্ট করতে পারছি না।’
যে সব বাড়িতে সেপটিক ট্যাংক নেই, তাদের এটি নির্মাণ করতে ছয় মাস সময় বেঁধে দেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, এরই মধ্যে আমি চিঠি পাঠিয়েছি। বলা হয়েছে ছয় মাসের মধ্যে নিজেদের সেপটিক ট্যাংক করবে নিজের জায়গাতে। এটা করতেই হবে।
‘আমি যখন বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গেলাম, আমাকে বলা হলো রাজউক তো আমাকে অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে বাড়ি করার জন্য। আমি রাজউককেও চিঠি দিয়েছি, নতুন যে বাসা বাড়ি হবে, সেপটিক ট্যাংক করতে হবে এবং সোক ওয়েলের যে সিস্টেম আছে, সেটা থাকতে হবে। এটা ফাংশনাল থাকতে হবে, শুধু দেখানোর জন্য না।’
মেয়র আতিক বলেন, ‘ডেভেলপাররা একটি বাড়ি বানানোর পর গ্যারেজের জায়গাটা বিক্রি করে দেয়। আপনি ৫০ লাখ নেন বা ৪০ লাখ নেন, আমার তাতে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু সেই বাড়িতে আপনাকে মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি থাকতে হবে।’
জায়গার অভাবে ফান্ড থাকার পরেও রাজধানীতে পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না বলে জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে পাবলিক টয়লেটের জন্য আমাদের এখন জায়গা দরকার। সিটি করপোরেশনের কিন্তু এক কাঠা জমিও নেই। ঢাকার জমি হচ্ছে রেলওয়ের, রাজউকের, পিডব্লিউডি বা বিভিন্ন ডেভলপারের।
‘টয়লেট করার জন্য আমার কাছে এখনও ফান্ড আছে, আরও ৩৫টি টয়লেট আমি করতে পারব।’