করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছোট নারী উদ্যোক্তাদের ১৫ কোটি ডলার ঋণ দেবে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বর্তমান বিনিময়হার হিসাবে টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এডিবির সদরদপ্তরে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এডিবির এই ঋণ করোনা মহামারিকালে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের যে সব উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের দেয়া হবে। তবে, যে সব নারী উদ্যোক্তা করোনার আঘাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই ঋণ পাবেন। এছাড়া যে সব প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন তারা এবং গ্রামের যুব উদ্যোক্তারাও এই ঋণ পাবেন।
এডিবি ঢাকা অফিসের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ দেয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তি করবে এডিবি। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংক ও অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ‘পার্টিসিপেটিং ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (পিএফআই)’ চুক্তির আওতায় উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়া হবে।’
ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সদরদপ্তর। ফাইল ছবি
এর আগেও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য এডিবি ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ দিয়েছে বলে জানান তিনি।
এডিবি বলছে, এই অর্থায়নে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ হাজার কুটির, মাইক্রো এবং ছোট আকারের উদ্যোক্তা উপকৃত হবেন এবং করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুব বেকারত্ব বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা। এই যুব সমাজের একটি বড় অংশ বিভিন্ন খুচরা ব্যবসা করতেন। করোনার ছোবলে তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৪ লাখ প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। অর্থের অভাবে তারা কোনো কিছু করতে পারছেন না। গ্রামের মানুষের আয় কমে গেছে। কৃষিবহির্ভূত কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। করোনায় গ্রামের ছোট ছোট উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, গ্রামীণ কর্মসংস্থানের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করেছিল।
এডিবির এই ঋণ এ সব জনগোষ্ঠীকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তারা সব সময়ই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ থেকে বঞ্চিত হন। করোনায় ছোট ছোট নারী উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেজন্য এডিবির এই ঋণের ২০ শতাংশ ক্ষুদ্র মহিলা উদ্যোক্তাদের দেয়া হবে।
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে ২০০ কোটি ডলার ঋণ-সহায়তা দিয়েছে এডিবি। এই সহায়তা করোনাকালে অন্য যেকোনো উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া সহায়তার চেয়ে বেশি।
এডিবির দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ ডংডং ঝ্যাং বলেন, ‘বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলকে এডিবি শুরু থেকে সমর্থন করছে। তবে করোনা মহামারির কারণে কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে। এজন্য ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের সাহায্য করতে এবং দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করছি আমরা।’