ঘরোয়া আলোচনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘কটূক্তি’ এবং শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও গাজীপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম পদে থাকবেন কি না, তা জানা যাবে ১৯ নভেম্বর।
শুক্রবার বিকেল ৪টায় আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় মেয়র জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তবে সেই সিদ্ধান্ত আসার এক দিন অগে গাজীপুরের অলিগলি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে-বিপক্ষে পোস্টারে সয়লাব হয়ে গেছে। জাহাঙ্গীরবিরোধী পোস্টার সাঁটানো হয়েছে ঢাকার কিছু এলাকাতেও।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, জয়দেবপুর, বোর্ডবাজার, কলেজগেট, চেরাগআলি, নতুন বাজার, টিএনটি বাজার এলাকায় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনতা’ ব্যানারে বিভিন্ন স্থানে মেয়রবিরোধী পোস্টার নজরে এসেছে। দলের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে তৈরি পোস্টার দেখা গেছে টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়েও।
রাতভর সাঁটানো এসব পোস্টার সকালে চোখে পড়ে নগরবাসীর। এরপর পোস্টার নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
শুধু গাজীপুরেই নয় জাহাঙ্গীরবিরোধী পোস্টার রয়েছে রাজধানীর উত্তরা, এয়ারপোর্ট, খিলক্ষেত ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাতেও।
এসব পোস্টারে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ছবিতে ক্রস এঁকে তাতে লেখা রয়েছে, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য প্রদানকারী বিএনপি-জামায়াত এজেন্ট গাজীপুরের মেয়র রাষ্ট্রদ্রোহী জাহাঙ্গীর আলমের বিচার চাই।’
সড়কের পাশের বিভিন্ন দেয়ালে এসব পোস্টার ঘিরে সাধারণ মানুষের কৌতুহল দেখা গেছে। তবে কে বা কারা এসব পোস্টার সাঁটিয়েছে তা জানা যায়নি।
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানান উন্নয়নচিত্র দিয়ে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পোস্টার সাঁটিয়েছে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা। এসব পোস্টারে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
চেরাগআলি এলাকায় এমন পোস্টার ঘিরে ৫-৬ জন যুবকের জটলা দেখা যায়। সামনে এগিয়ে যেতেই একজনের মন্তব্য শোনা যায়, ‘যেই মেয়র নৌকা মার্কা নিয়ে মেয়র হইছে। সেই মেয়রই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করে। আওয়ামী লীগের ভেতর এমন অসংখ্য মোস্তাক রয়েছে, তাদেরকে এখনই চিহ্নিত করা প্রয়োজন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগের চেতনার অংশ। মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সেই চেতনায় আঘাত করেছে। এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যের কারণে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিবেন৷’
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড সচিব কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আনোয়ারুল করিম জুয়েল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রীর সেই উন্নয়নগুলো প্রচারের জন্য মেয়র মহোদয় ২০ হাজার পোস্টার করেছেন।
‘সেগুলো নগরীর বিভিন্ন জায়গায় লাগাচ্ছি আমরা, কিন্তু একটি মহল প্রধানমন্ত্রী ও গাজীপুরের উন্নয়নমূলক প্রচারকে বাধাগ্রস্ত করতে মেয়র বিরোধী পোস্টার বানিয়ে তা রাতের আঁধারে লাগাচ্ছে।’
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহুল আমিন বলেন, ‘মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের তিন বছরের দায়িত্বকালে যে উন্নয়ন গাজীপুরে হয়েছে তা আগের ২০-৩০ বছরেও হয়নি। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড সচিব কল্যাণ পরিষদের সদস্যরা সেসব উন্নয়নচিত্র প্রচার করছে, কিন্তু একটি কুচক্রী মহল রাতের অন্ধকারে মেয়র বিরোধী পোস্টার লাগাচ্ছে। তারা গাজীপুরের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কিছু টাকা দিয়ে দিলে যেকোনো মানুষের বিরুদ্ধে পোস্টার-ব্যানার লাগানো যায়। যারা এসব করতেছে তাদের নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য আছে, নয়তো তারা কেন আমার পোস্টার লাগাবে।
‘রাতের অন্ধকারে কেন পোস্টার লাগাবে? পারলে দিনের বেলায় করুক। ভালো কাজ হলে তো দিনের আলোতেই করত।’
সম্প্রতি নিজ বাসায় একজনের সঙ্গে কথোপকথনের ভিডিও ফেসবুকে ফাঁস হওয়াকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা।
প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধিকার আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গাজীপুর আওয়ামী লীগের অন্যতম এ নেতা।
গাজীপুর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানকে নিয়েও আপত্তিকর বক্তব্য আছে সে ভিডিওতে।
বিষয়টি পছন্দ হয়নি স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় অংশের। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নানাভাবে ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তারা। ভিডিওর বক্তব্যের বিষয়ে এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সংসদ। সেই নোটিশের জবাবও দিয়েছেন জাহাঙ্গীর।
শুরু থেকেই ভিডিওকে বানোয়াট বলে আসছেন জাহাঙ্গীর। তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর একটি সমাবেশও করেন। পাশে তার বিরোধীদেরও অবস্থান ছিল। পুলিশ বিরোধীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার পর জাহাঙ্গীর নির্বিঘ্নে সমাবেশ করেন।