বাঙালির ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব উপলক্ষে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে বসেছে মাছের মেলা।
বৃহস্পতিবার ভোরে শুরু হওয়ায় মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলা উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা এনেছেন নানা প্রজাতির ৫০০ মণ মাছ। ৩-৪ কেজি থেকে শুরু করে আনা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৫ কেজি ওজনের মাছও। এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রকার ও আকারভেদে ৩০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে।
আয়োজকরা জানান, নবান্ন উৎসবকে ঘিরে প্রায় ১০ বছর ধরে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার পাঁচশিরা বাজারে বসে এই মাছের মেলা। এ উপলক্ষে আগের দিন রাত থেকেই এখানে মাছ নিয়ে আসেন স্থানীয়সহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা। মেলায় মাছ কিনতেও আসেন দূরদূরান্তের অনেকে। মূলত নবান্নে মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের আপ্যায়নে ব্যবহার করা হয় এই মাছ।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় রুই, কাতল, বিগহেড, সিলভার কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। দোকানে দোকানে শোভা পাচ্ছে তিন-চার কেজির পাশাপাশি ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ কেজি ওজনের কাতল মাছ।
তবে অধিকাংশ ব্যবসায়ীর দোকানে পাঁচ থেকে আট কেজির মাছের সংখ্যা বেশি, যেগুলো বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি সাড়ে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
মেলায় আনা সবচেয়ে বড় মাছের ওজন ৩৫ কেজি। ৪২ হাজার টাকায় কাতল মাছটি বিক্রি হয়েছে বলে জানান এটি আনা ব্যবসায়ী।
মেলায় মাছ কিনতে আসা উপজেলার বামনগ্রামের কলেজশিক্ষক চিত্তরঞ্জন দেবনাথ জানান, কয়েক বছর ধরে তিনি এ মেলার মাছ কিনে পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে নবান্ন উৎসব পালন করেন। এবার ছয় কেজি ওজনের দুটি মাছ কিনতে মেলায় এসেছেন। এমন মাছের দাম চাওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি।
ক্ষেতলাল উপজেলার ইলেকট্রনিকস ব্যবসায়ী মাইনুর রহমান জানান, বড় আকারের কাতল মাছ কেনার জন্য তিনি মেলায় এসেছেন। দেড় হাজার টাকায় কিনেছেন ৫ কেজি ওজনের এমন একটি মাছ।
মাছ বাজারের ইজারাদার সানোয়ার হোসেন জানান, এ বছর মেলায় প্রায় ৫০০ মণ মাছ আনা হয়েছে। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। তবে গত বছর আরও বেশি মাছ এনেছিলেন ব্যবসায়ীরা।
মাছের ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম জানান, মেলায় বিক্রির জন্য বড় একটি ট্রাকভর্তি মাছ নিয়ে এসেছেন। তিনিই মেলার সবচেয়ে বড় মাছ ৩৫ কেজির কাতলটি এনেছেন। এটি বিক্রি করেছেন ৪২ হাজার টাকায়। এ ছাড়া ৬-৭ কেজি ওজনের কাতল ৬০০ টাকা কেজি এবং ৮-১০ কেজি ওজনের বিগহেড মাছ ৩৫০-৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মেলায় মাছের চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় তিনি খুশি বলেও জানান।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, ২০১২ সালে নবান্ন উৎসবে পাঁচশিরা বাজারে এই মাছের মেলা তারাই প্রথম শুরু করেছিলেন। সেই মেলা এখন পূর্ণতা লাভ করেছে। তিনিও মেলায় বিক্রির জন্য এক ট্রাক মাছ নিয়ে এসেছেন। এখন পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি মাছ বিক্রি হয়ে গেছে।
কালাই উপজেলা চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, ‘প্রতিবছর এ মেলা থেকে বড় বড় মাছ কেনার জন্য এলাকার মানুষ মুখিয়ে থাকেন। মানুষ বড় বড় মাছ যেমন কিনতে আসেন, আবার দেখতেও আসেন অনেকে। এ জন্য মেলায় মানুষের প্রচণ্ড ভিড় হয়। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।’