বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো না জানিয়ে অবিলম্বে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির আলোচনা সভার বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আহ্বান জানাতে চাই, অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। তার জীবন রক্ষা করুন। এর সঙ্গে রাজনীতিকে নিয়ে আসবেন না।’
১৩ নভেম্বর বিকেলে খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে এভারকেয়ারে ভর্তি করানো হয়। শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় পরের দিন ভোরে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছে তার।
খালেদার অবস্থা ভালো নয় বলে বিএনপি থেকে জানানো হয়েছে। মানবিক স্বার্থে হলেও দলীয় প্রধানকে বিদেশ নিয়ে যেতে সরকারের অনুমতি চেয়েছেন তারা।
তবে এ বিষয়ে সরকার থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া যাচ্ছে না। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কয়েকবারই বলেছেন, খালেদা জিয়ার করা আবেদনটি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী আগেই নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশ যেতে অনুমতি দেয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই।
আইনমন্ত্রীর মতে, আইন অনুযায়ী বিদেশ যেতে চাইলে খালেদাকে ফের জেলে গিয়ে আবেদন করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার সুযোগ না দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে চান কীভাবে বলেন তো? খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসা করতে দিয়েছি, এটাই কি বেশি না?’
তিনি বলেন, ‘আপনাকে কেউ যদি হত্যা করার চেষ্টা করত, আপনি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বলেন আমাকে?’
নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করিয়ে বাড়ি ফেরার সুযোগ করে দেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারপরেও আমরা অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই তাকে আমরা অন্তত তার বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু… এক্সিকিউটিভ অথরিটি আমার হাতে যতটুকু আছে, সেটুকু দিয়ে তাকে বাসায় থাকার, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর বাকিটা আইনগত ব্যাপার।’
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রাণপন চেষ্টা করছেন তাকে সুস্থ করে তোলার। সুস্থ করে ঘরে পাঠিয়েছিলেন, আবার তিনি বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন। একটা অসুখ তার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বাইরে চিকিৎসা করতে পাঠানোটা জরুরি।
‘ডাক্তাররাই বলছেন, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠালে তিনি সুস্থ হবেন। তারা আশা করছেন সেটা। দেশের একটা উন্নত হাসপাতাল, তারপরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, বেগম জিয়ার চিকিৎসার সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা এখানে নেই। বিদেশে পাঠাতে হবে। আজকে অন্যান্য দলগুলোও বলছেন এই কথা, কিন্তু আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীগের নেত্রী সেটিকে গ্রহণ করছেন না।’
‘খালেদা জিয়ার আনা গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে’
আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বান এই দেশের মানুষ গণতন্ত্রকে এরশাদের হাত থেকে ছিনিয়ে এনেছিল। আজকে সেই গণতন্ত্র পুরোপুরিভাবে হারিয়ে গিয়েছে। আজকে আওয়ামীলীগ ও তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা একটি স্বৈরাচারী সরকারের প্রচণ্ড রকমের দমন পীড়নের ফলে আজকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সমস্তকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য তার সারাটা জীবন অতিবাহিত করলেন। যিনি একজন গৃহবধূ ছিলেন, শুধুমাত্র জনগণেরর অধিকার আদায়ের জন্য রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিলেন এবং দেশের পথে প্রান্তরে ছুটে বেড়িয়েছিলেন সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আজকে অন্যায়ভাবে, বেয়াইনিভাবে, একটা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর ধরে।
‘তিনি দীর্ঘ আড়াই বছর একটি নির্জন কারাগারে, কেন্দ্রীয় কারাগারে একটি নিম্নমানের ঘরের মধ্যে তিনি ছিলেন। যার ফলে অনেকগুলো ব্যাধি তার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে কোনো চিকিৎসার সুযোগ ছিল না। চিকিৎসা না দেয়ার ফলে আজকে তার অনেক রোগ দেখা দিয়েছে।’
খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তার বিষয়টি তুলে বলেন, ‘বন্ধুগণ, আমরা সবাই জানি আমাদের নেত্রী আমাদের হৃদয়ের কত কাছের মানুষ। এ দেশের ১৬ কোটি মানুষের কত কাছের মানুষ। একজন রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করুন তিনিও দোয়া করেন যে আল্লাহ খালেদা জিয়াকে আপনি সুস্থ করে দেন। একজন শ্রমিককে জিজ্ঞেস করুন, তিনিও বলবে, আল্লাহ খালেদা জিয়াকে আপনি মুক্ত করে দেন।
‘এ নেত্রীকে অপমান করা মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অপমান করা। কারণ ১৯৭১ সালে তিনি গৃহবন্দি ছিলেন।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালামসহ আরও অনেকে।