প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর পরও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়নি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার সুযোগ এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, টিএসসি নির্মাণে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে কবে নাগাদ সেটি হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান, মনন ও সাংস্কৃতিক ভাব আদান-প্রদানের জায়গা ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আদলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও (চবি) টিএসসি নির্মাণের প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের বহুদিনের।
টিএসসি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে পাঠচক্র করছে শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার্থীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি না থাকায় বিচ্ছিন্নভাবে সাংগঠনিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালায় ক্যাম্পাসের সংগঠনগুলো। বিভিন্ন অনুষদের মিলনায়তন ও খোলার মাঠে এসব কর্মকাণ্ড করতে হচ্ছে তাদের।
বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থী আড্ডার জন্য চলে যান শহরে। সকাল থেকে দুপুর গড়াতেই নির্জীব ও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে ক্যাম্পাস। ঝুপড়ি, বুদ্ধিজীবী চত্বর, জাদুঘরের সামনে কিংবা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের আড্ডা থাকলেও শিক্ষকদের উপস্থিতি সেখানে খুবই কম। ফলে নিজ বিভাগের বাইরে জ্ঞান অর্জন ও জানার পরিধি সংকীর্ণ হয়ে আছে।
টিএসসি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে পাঠচক্র করছে শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার নিউজবাংলাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য টিএসসি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা শুধু পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ না, পরিবেশ-আড্ডা-এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিস থেকে শেখার অনেক কিছু আছে।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি আছে তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক এগিয়ে আছে। এমন কোনো দিন নেই টিএসসিতে কোনো কার্যক্রম থাকে না। ফলে কোনো ছাত্র চাইলে সেখানে গিয়ে বসতে পারে, শিখতে পারে। আমি দেখছি আমার ছাত্ররাও এইসবে অনেক আগ্রহী। তাদের আগ্রহ আছে।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান মেহেদী বলেন, ‘টিএসসি অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার বাইরে জ্ঞানার্জনের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। টিএসসির অভাবে যেমন শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ চিন্তার অসারতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না তেমনি তৈরি হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে দূরত্ব।’
পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আলতাফ-উল-আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনে আমরা যে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছি সেখানে টিএসসি নির্মাণের কথা উল্লেখ আছে। সেখানে সাত হাজার ৯৯৬ বর্গমিটারের তিন তলা বিশিষ্ট টিএসসি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি আমাদের মাস্টার প্ল্যানের অংশ। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৮ কোটি টাকা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল বলেন, ‘আমরা টিএসসির জন্য ডিপিপিতে (উন্নয়ন পরিকল্পনা) দিয়েছি। সেটা ইউজিসি হয়ে মন্ত্রণালয়ে যাবে। মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর একনেকে যাবে। এরপর প্রস্তাব পাস হলে তারপর টিএসসি হবে। এটা মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী চাকসুর পাশে হতে পারে।’