খুলনার কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও সিরিয়াল কিলার এরশাদ শিকদার তার নানা অপরাধের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নগরীর রেলস্টেশন ও ভৈরব নদীর ঘাট এলাকায়।
২০০৪ সালে ফাঁসি কার্যকর হওয়া সেই এরশাদ শিকদারের নামে ভৈরবের ৫ নম্বর ঘাট এলাকায় এখনও চলছে একটি বিদ্যালয়। এরশাদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে এটি ২০১৩ সালে এমপিওভুক্তও হয়েছে।
গত বছর বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছর স্কুলের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রস্তাবিত নাম ‘ভৈরব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। তবে এক বছর ধরে প্রস্তাবটি সদর থানা শিক্ষা অফিস থেকে জেলা শিক্ষা অফিসে পৌঁছায়নি।
তাদের দাবি, করোনার কারণে ফাইল পৌঁছাতে দেরি হতে পারে। তবে বিতর্কিত নাম পরিবর্তনের এখনও সুযোগ রয়েছে।
বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের তিনটি কক্ষই ব্যবহারের অনুপযোগী। একটি কক্ষে শিক্ষকরা বসছেন, আরেকটিতে চলছে রং করার কাজ। অন্য কক্ষে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। প্রাক-প্রাথমিকসহ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এখানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৬৬ জন।
বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রায়হান ও পঞ্চম শ্রেণির জুবায়ের জানায়, তারা শুনেছে এরশাদ মানুষ খুন করতেন। হত্যার পর নদীতে মরদেহ ফেলে দিতেন। সেই এরশাদ শিকদারের নামে তাদের স্কুলের নাম হওয়ায় নানা কথা শুনতে হয়। স্কুলের নামটি পরিবর্তন হলে তাদের জন্য ভালো হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শওকত আলী শেখ জানান, ১৯৮৯ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন এরশাদ শিকদার। রেলওয়ের ৪৯ শতক জমি এনওসি নিয়ে নির্মিত বিদ্যালয়টির নাম দেয়া হয় ‘এরশাদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়’। ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি বেসরকারি রেজিস্টার্ড বিদ্যালয় হিসেবে এটি অনুমোদন পায়। ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন জানান, গত বছর বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তনের বিষয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রস্তাবিত নাম ‘ভৈরব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। তবে করোনার কারণে এটার কোনো অগ্রগতি হয়নি।
তিনি বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ সবাই বিতর্কিত নামটি পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি, খুব দ্রুত এটার পরিবর্তন হবে।’
খুলনার সদর থানার শিক্ষা কমকর্তা শেখ মো. নুরুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে তাদের কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি এসেছে। ফাইলটি যার কাছে ছিল তিনিও সম্প্রতি অবসরে গেছেন।
জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুদ্দৌহা বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বির্তকিত নাম পরিবর্তনের জন্য একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। স্কুল কমিটি রেজুলেশনের মাধ্যমে প্রস্তাবনা করবেন। এরপর আমরা জেলা কমিটিতে অনুমোদনের পর মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। এখানে তেমন কোনো খরচ বা ঝামেলা নেই। স্কুলটি অবশ্যই বিতর্কিত নামে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও সিরিয়াল কিলার এরশাদ শিকদারের জন্ম ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রামে। ১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি নলছিটি থেকে খুলনায় আসেন। ১৯৭৬-৭৭ সালে ‘রামদা বাহিনী’ নামে একটি দল গড়ে খুলনা রেলস্টেশন ও ঘাট এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতেন।
এই রামদা বাহিনী নিয়ে ১৯৮২ সালে ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকা দখল করেন এরশাদ। ১৯৮২ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে খুলনা সিটি করপোরেশনের তৎকালীন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনারও হন।
১৯৯১ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এরশাদ শিকদার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর দলটিতে যোগ দেন। তবে কিছু দিন পরই তাকে বহিষ্কার করা হয়।
১৯৯৯ সালে গ্রেপ্তার হন এরশাদ শিকদার। তখন তার নামে ৪৩টি মামলার বিচার চলছিল। যার অধিকাংশই ছিল হত্যা মামলা। নিম্ন আদালতের বিচারের পর সাতটি হত্যা মামলায় তার ফাঁসি ও চারটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়। ২০০৪ সালের ১০ মে খুলনা জেলা কারাগারে এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।