চলতি বছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশে ২ হাজার ৩০০ কোটি (২৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্বব্যাংক। আর এই অঙ্ক হবে ২০২০ সালের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি।
এর মধ্য দিয়ে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রাপ্তির দিক থেকে বাংলাদেশ এ বছর অষ্টম থেকে সপ্তম স্থানে উঠে আসবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
করোনা মহামারির মধ্যেও এ বছর সারাবিশ্বে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ।
২০২১ সাল শেষ হতে আরও দেড় মাস বাকি থাকলেও বুধবার বিশ্বব্যাংকের সদরদপ্তর ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রকাশিত অভিবাসন ও উন্নয়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেশ ও অঞ্চলভিত্তিক ২০২১ সালের রেমিট্যান্সপ্রবাহের এই পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
‘কোভিড-১৯ পুনরুদ্ধার: আয়নায় অভিবাসন’ শিরোনামের প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থ উভয় অভিবাসনের সম্ভাব্য অবস্থার পর্যালোচনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর (জিসিসি) অর্থনীতিতে চাঙ্গভাব ফিরে এসেছে। এর ফলে এ সব দেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যে সব লোক কাজ করেন, তারা বেশি বেতন বা মজুরি পাবেন। সেইসঙ্গে নতুন অনেকে এ সব দেশে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
সবমিলিয়ে তেল উৎপাদনকারী মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়বে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ২০২০ সালের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ৮ শতাংশ বেড়ে ১৫৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসবে ভারতে; ৮৭ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। পাকিস্তানের রেমিট্যান্স আসবে ৩৩ বিলিয়ন ডলার; বাড়বে রেকর্ড ২৬ শতাংশ।
আর বাংলাদেশে আসবে ২৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স, যা দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২০ সালের চেয়ে বেশি আসবে ৬ শতাংশ।
করোনা মহামারির মধ্যেও চলতি বছর সারাবিশ্বে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ছবি বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে নেপালে ২০২১ সালে রেমিট্যান্স আসবে ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। শ্রীলঙ্কায় ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন, আফগানিস্তানে দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, ভূটানে দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসবে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রবাসী আয় প্রাপ্তির দিক থেকে বাংলাদেশ এ বছর এক ধাপ উপরে উঠে সপ্তম স্থানে থাকবে। ২০২০ সালে ছিল অষ্টম।
প্রবাসী আয়ের পরিমাণের দিক থেকে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে আছে ভারত (৮৭ বিলিয়ন ডলার), দ্বিতীয় স্থানে চীন (৫৩ বিলিয়ন ডলার), তৃতীয় স্থানে মেক্সিকো (৫৩ বিলিয়ন ডলার)। চতুর্থ ফিলিপাইন (৩৬ বিলিয়ন ডলার), পঞ্চম মিশর (৩৩ বিলিয়ন ডলার), ষষ্ঠ পাকিস্তান (৩৩ বিলিয়ন ডলার) এবং সপ্তম স্থানে বাংলাদেশ (২৩ বিলিয়ন ডলার)। অষ্টম, নবম এবং দশম স্থানে থাকবে যথাক্রমে ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়া ও ইউক্রেন।
ছবি বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থানে থাকবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী সোয়া কোটির মতো প্রবাসী ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ (২১.৭৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে পাঠিয়েছিলেন ১৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।
আর অর্থবছরের হিসাবে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল বাংলাদেশে। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কোনো বছর বা অর্থবছরের এই পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।
তবে, সেই জোয়ারে কিছুটা ভাটা পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) রেমিট্যান্সের তথ্য প্রকাশ করেছে।
তাতে দেখা যায়, এই চার মাসে ৭ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ কম।