বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বর এলো ঘোড়ায় চড়ে, কনে পালকিতে

  •    
  • ১৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:৫৫

বর আজিমের মা বিবি ফাতেমা বলেন, ‘ছেলে ছোট বেলা থেকে গল্প শুনছে, পালকিতে বউ নেয়া হতো এবং বর ঘোড়ায় চড়ে আসত। তখন থেকে শখ ছিল, তার বিয়েতে পালকি ও ঘোড়া নেবে। আমাদের কাছে আবদার করেছে, আমরাও তার কথা মতো আবদার রাখার চেষ্টা করেছি।’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর দেড়টা। ভোলার শহর জুড়ে যান্ত্রিক ব্যস্ততার মধ্যে হঠাৎ দেখা যায় লাল সেরওয়ানি ও মাথায় লাল পাগড়ি পরে সুসজ্জিত ঘোড়ায় চড়া বর। তার পাশেই চার বেহারার কাঁধে পালকি।

পুরোনো দিনের বিয়ের এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে বুধবার ভোলা শহরের গাজীপুর রোড এলাকায়।

বরের সঙ্গে থাকা কয়েকজন জানান, হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনুযায়ী শহরের গাজীপুর রোড এলাকার বর আনোয়ারুল আজিম যাচ্ছেন উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়ন ছোট আলগীতে কনে সুমাইয়া আক্তার ইরার বাড়ি। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেখান থেকে কনেকে পালকিতে নিয়ে ফিরবেন আজিম।

বর আনোয়ারুল আজিম রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসে কাজ করেন। আজিমের শখ পূরণ এবং উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিলুপ্ত প্রায় গ্রামীণ সংস্কৃতি অনুযায়ী ব্যতিক্রমী এ বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।

এমন বিয়ে নিয়ে বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়ি পর্যন্ত পুরো রাস্তায় ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। বিয়ে বাড়িতে সুসজ্জিত পালকি ও ঘোড়া নিয়ে ছিল নানা কৌতুহল।

এমন বিয়ের আয়োজন নিয়ে বর আজিম বলেন, ‘পালকিটা মূলত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যে। আমার জন্মের পর থেকে কখনও বিয়েতে বাহন হিসেবে পালকি ও ঘোড়ার ব্যবহার দেখিনি। সেই ছোটবেলা থেকেই মনের মাঝে একটা শখ জমে ওঠে।

‘বিষয়টা আমি আমার মা-বাবার সাথে শেয়ার করি, কিন্তু একটা পর্যায় এসে এই আশাটা মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে হয়। কারণ ভোলায় নেই কোনো পালকির ব্যবস্থা। পরবর্তীতে এলাকার এক কাঠের দোকানে যোগাযোগ করলে অনেক কষ্টের পর ব্যবস্থা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যে তরুণ প্রজন্ম যারা আছে ভবিষ্যতে বিয়ে করবে তারা আমাকে দেখে এই পালকি ও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখুক। এতে করে আমাদের পুরাতন যে ঐতিহ্য আছে তা ফিরে আসবে।’

আজিমের মা বিবি ফাতেমা বলেন, ‘ছেলে ছোট বেলা থেকে গল্প শুনছে, পালকিতে বউ নেয়া হতো এবং বর ঘোড়ায় চড়ে আসত। তখন থেকে শখ ছিল, তার বিয়েতে পালকি ও ঘোড়ার নেবে। আমাদের কাছে আবদার করেছে, আমরাও তার কথা মতো আবদার রাখার চেষ্টা করেছি।’

বরের বন্ধু ইভান তালুকদার বলেন, ‘বিয়েতে প্রাচীন বাংলার যে ঐতিহ্য তা হচ্ছে, পালকি ও ঘোড়া। এটি আজকের প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প, কারণ তারা এটা কখনও দেখেনি। আমরা আশা করছি আমাদের হারানো ঐতিহ্য এই বিয়ের মাধ্যমে ফিরে পাব।’

বিয়েতে আসা ভোলা সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. এরশাদ বলেন, ‘আমরা এক সময় দেখেছি, বিয়ে হলে পালকি ও ঘোড়ার ব্যবহার হতো। ধীরে ধীরে এটা হারিয়ে গিয়েছে। এই সময়ে এ ধরনের একটা উদ্যোগ যেন পুরাতন ঐতিহ্যকে ফের জীবিত করা, এটা একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’

পালকির বেহারা আমজাদ উদ্দিন বলেন, ‘এক সময় বিয়েতে পালকির ব্যবহার হতো। এখন আর হয় না। এখন মাইক্রো, রিকশা ও গাড়ি বিয়ের যাতায়াতের কাজে ব্যবহার হয়। আগে আমরা এই পালকিতে কইরা বউ আনতাম-নিতাম, এহন আর বিয়াতে কেউ পালকি নেয় না। দেশেই পালকি নাই এহন। আইজগা বিয়া উপলক্ষে হেরা এই পালকি দিছে আমাগোর তোন খুব ভালো লাগছে।’

এ বিভাগের আরো খবর