হাতকড়া পরা অবস্থায় শিশুসন্তানকে জড়িয়ে ধরেছেন বাবা। বরগুনার এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলোচনার খোরাক হয়েছে। সোমবার আদালতের নির্দেশে বরগুনা জেলা কারাগারে নেয়ার সময় হাতকড়া পরা বাবার গলা জড়িয়ে ধরার ওই ছবিটি তোলেন শিশুটির চাচা জুয়েল।
পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জুয়েল নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ছবিটি পোস্ট করেন। এক দিনের ব্যবধানেই দেশজুড়ে সাড়া ফেলেছে এই ছবি।
বুধবার ঘটনাটির বিবরণ দিতে গিয়ে শিশুটির চাচা এইচ এম জুয়েল জানান, আমতলী পৌরসভার সবুজবাগ এলাকায় তার ভাই বাহাদুর খানের বাসা। একই বাসার পাশের কক্ষে মামাতো ভাই আবু হানিফ পরিবার নিয়ে থাকেন। বাহাদুরের শিশুসন্তান আলিফ ও হানিফের শিশু হামিম উভয়েরই বয়স তিন বছর। তারা একসঙ্গেই খেলাধুলা করে। গত ১০ অক্টোবর বাড়ির উঠোনে বসে খেলছিল হামিম ও আলিফ। পরে তাদের মধ্যে ঝগড়া ও ধস্তাধস্তি হয়। এতে চোখে আঘাত পায় হামিম।
এ ঘটনার পর হামিমের চিকিৎসা করায় আলিফের পরিবার। কিন্তু হামিমের মা মাইসুরা বেগম এতে সন্তষ্ট না হয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশ করে হামিমের চিকিৎসা বাবদ ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন।
পরে আলিফের পরিবার এই টাকা দিতে সম্মত হলেও গত ১ নভেম্বর হামিমের মা মাইসুরা বাদী হয়ে আলিফের বাবা বাহাদুর খানসহ চারজনকে আসামি করে আমতলী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।
বাহাদুর খানের পক্ষে আইনজীবী মো. জসীম জানান, সোমবার ১৫ নভেম্বর আলিফের বাবা বাহাদুর খানসহ অন্য পাঁচ আসামি আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। বিচারক মোহাম্মদ সাকিব চারজনের জামিন মঞ্জুর করলেও আলিফের বাবা বাহাদুর খানের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
শিশু আলিফের চাচা এইচ এম জুয়েল খান বলেন, ‘সামান্য বিষয়টা তারা আদালত পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। স্থানীয় গণ্যমান্যরা মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরাও ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছিলাম। তবুও তারা মামলা উঠিয়ে নেয়নি। এটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
তিনি বলেন, ‘নিজের জন্য বাবার হাতে হাতকড়া- এই দায়ভার নিয়ে বড় হবে আলিফ? এটা সত্যি দুঃখজনক।’
স্থানীয় সামাজিক উন্নয়ন সংগঠন এনএসএস পরিচালক, সাহাবুদ্দিন পান্না বলেন, ‘বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছি। আমি যতদূর জানি, উভয় শিশু পরস্পর নিকটাত্মীয়। অবুঝ শিশু খেলাধুলা করবে, ঝগড়া করবে আবার কিছুক্ষণ পরই মিশবে। এ ঘটনা যতদূর গড়িয়েছে, সত্যি বাজে উদাহরণ।’
এ বিষয়ে আমতলী পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড (সবুজবাগ) কাউন্সিলর মোয়াজ্জেম হোসেন ফরহাদ বলেন, ‘বিষয়টি শুরু থেকেই আমি জানি। ওরা দুজনেই শিশু, খেলারছলে এ রকম ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে ঘটনাটি মামলা পর্যন্ত যাওয়া ঠিক হয়নি। আমরা মীমাংসার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু তা কোনো কাজে আসেনি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে হামিমের পরিবারের সঙ্গে মুঠেফোন ও সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাদের কারো সঙ্গেই কথা বলা সম্ভব হয়নি।