ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকে প্রশংসা করেছেন। ওপেন অ্যান্ড ফ্রি, ইনক্লুসিভ ইন্দো-প্যাসেফিক চায় বাংলাদেশ। জোটে কারও একক আধিপত্য চায় না বাংলাদেশ। শিগগিরই এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করা হবে।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জোট ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) ২১তম সম্মেলনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান।
দুই বছরের (২০২২-২৩) জন্য ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। ১৫ নভেম্বর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৩টি রাষ্ট্রের সংস্থা আইওআরএ সম্মেলন শুরু হয়।
মোমেন বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) একটা স্ট্র্যাটেজি আছে। যুক্তরাজ্যেরও (ইউকে) একটা স্ট্র্যাটেজি আছে। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আলাদা স্ট্র্যাটেজি আছে। তেমনি বাংলাদেশেরও স্বতন্ত্র ভাবনা আছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের সঙ্গে যে যৌথ স্টেটমেন্ট দেয়া হয়েছে তাতে এ সম্পর্কে একটা প্যারা আছে। সেটা যেহেতু আছে, আমরা এটা নিয়ে আরও কাজ করছি। আমরা আইওআরএ-এর চেয়ারম্যান হলাম।’
ব্রিফিং এ পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এই দুই বছরে আমরা এটা নিয়ে আরও কাজ করব। পরে তা আমরা প্রকাশ করব। এ জন্য সময় লাগবে।
‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিক বা আইপিএস ভিশন এর কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে সবাই বিশ্বাস করে, ভারত মহাসাগর থাকবে উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও এটি অর্থনৈতিক কাজে ব্যবহৃত হবে৷ কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে এখনও সঠিক কোনো অবস্থান নির্ধারিত হয়নি। সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর মতো কোনো কাঠামোগত পর্যায়ে এখনও যাওয়া যায়নি। আগামীতে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে। বাংলাদেশেরও আইপিএস নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। ভারত মহাসাগরের সম্ভাবনা ঠিক কীভাবে কাজে লাগানো যায়, এসব বিষয় নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, এই সম্মেলনে।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আগামী জুলাই মাসে আবারও বৈঠক হবে। সেখানে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নির্ধারণ ও স্পষ্ট করা হবে।
সম্মেলনের আলোচনায় মৎস্যসম্পদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ব্লু ইকোনমিসহ মোট ছয়টি বিষয় প্রাধান্য পায়।
এ সম্মেলন পর্যবেক্ষণ করতে এরই মধ্যে ঢাকায় এসেছেন কমনওয়েলথ, জাতিসংঘ ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-সহকারী সচিব কেলি কিডারলিং। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, তানজানিয়া এবং ইউনিয়ন অব কমোরসের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন।
সচিব বলেন, ‘রাশিয়া নতুন সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছে। আগের বৈঠকে তারা আবেদন করেছিল। আজ এটা গ্রহণ করা হয়েছে। তারা সংগঠনের ২৪তম সদস্য হিসেবে আগামীকাল থেকে যোগ দেবে। প্রসেসিং ত্রুটির জন্য এবার সৌদি আরব সদস্যপদ পায়নি। এবার তাদের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীতে হয়ত তারা সদস্য পদ পাবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবাবের সম্মেলনে সব প্রতিনিধির অংশগ্রহণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। করোনা মহামারির মধ্যেও সব প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। ১৫ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সরাসরি উপস্থিতি ছিলেন ঢাকা সামিটে। এখানে ঢাকা অ্যাকশন প্লান হাতে নেয়া হয়েছে। একটা ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ওর্য়াকিং গ্রুপ ও তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সম্মেলেনে আলোচনা হয়েছে, ইমপ্যাক্ট অব কোভিড নাইনটিন অ্যান্ড রিকোভারি প্ল্যান ইন ইন্ডিয়ান ওশেন স্যারাউন্ডিং কান্ট্রিজ। এতে বলা হয়েছে, অনেক দেশেই টিকার তৃতীয় ডোজ শুরু হলেও অনেক আফ্রিকান দেশ ও সাউথ আফ্রিকায় এখনও ভ্যাকসিন যায়নি। বলতে গেলে তারা ভ্যাকসিন পায়নি। বাংলাদেশ সকল দেশের জন্য ভ্যাকসিন সহজলভ্য ও বিনাস্বত্বের দাবি জানিয়েছে।’
‘ভ্যাকসিন গ্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক পণ্য হিসেবে গণ্য করতে হবে। ন্যায্য দামে সবার কাছে যাতে পৌঁছে এ নিয়ে জোরালো কথা হয়েছে। ঢাকা আইওরা এ্যাকশন ইনিশিয়েটিভ গ্রহণ করা হবে, যাতে করে দৃশ্যমান কিছু কাজ হয়। সেটাও দুই বছরেই বাস্তবায়ন হবে। জ্ঞান ও প্রযুক্তি ভাগাভাগির বিষয়গুলো থাকবে এতে।’
ব্রিফিংএ জানানো হয়, ঢাকা সামিটে শ্রীলঙ্কা ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইন্দোনেশিয়া সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীসহ মোট ৮২ জন প্রতিনিধি সশরীরে অংশ নিয়েছেন এ সম্মেলনে।