ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে প্রথম বর্ষের দুই শিক্ষার্থীকে ‘অশ্লীল’ গানে নাচতে বাধ্য করা এবং মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তৃতীয় বর্ষের কয়েক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে হলের অপরাজিতা ভবনের এক্সটেনশন চার-এ ওই ঘটনাটি ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী।
বুধবার ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে আয়েশা আক্তার রিজু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানীর কাছে লিখিত অভিযোগটি দিয়েছেন। পরে এই অভিযোগপত্র রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদার কাছে পাঠান প্রক্টর।
ভুক্তভোগী অন্যজনের প্রসঙ্গে রিজু বলেন, ‘অন্য জন আমার সহপাঠী। সে এসবে জড়াতে চাচ্ছে না, তাই তার নাম প্রকাশ করছি না।’
রিজুর অভিযোগ, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জুলি মারমা এবং নাসরিন জাহান খুশি তাকে এবং তার সহপাঠীকে নাচতে বাধ্য করেছেন। আর অভিযুক্তদের সহযোগিতা করেছেন তাদের বন্ধু মার্কেটিং বিভাগের জান্নাত নিপু, পূজা দাস এবং রিনাকী চাকমা। নাসরিন জাহানের বিভাগের নাম জানা যায়নি।
অভিযোগপত্রে আয়েশা রিজু লিখেছেন, ‘গতকাল রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টা নাগাদ এক্সটেনশন তিন-এর কয়েকজন আপু আমার রুমে আসেন। তারা হাসি-তামাশা করে চলে যান এবং পুনরায় ফিরে আসেন। তখন ভাষাভিত্তিক বিভিন্ন আলোচনা চলছিল আপুদের মধ্যে। এরই ধারাবাহিকতায় যথেষ্ট সম্মান ও বিনয়ের সাথে আমি জুলি আপুকে জিগ্যেস করি, ‘আপু, আমি ভাত খাই’- এটাকে আপনাদের ভাষায় কীভাবে বলে?
এই কথায় তিনি রাগান্বিত হয়ে আমাকে ধমকিয়ে বলেন, ‘তুই আমাকে জিজ্ঞেস করিস, তর সাহস তো কম না! তোকে র্যাগ দিতে হবে।’
তারপর নাসরিন জাহান খুশি আপু বলে উঠল, ‘শুধু ওকে না, এই ফ্লোরের প্রত্যেকটারে র্যাগ দিতে হবে।’
তখন নিপু আপু আমার আরেকজন সহপাঠীকেও র্যাগ দেওয়ার জন্য আমার রুমে নিয়ে আসেন।
রিজু জানান, এরপর তাদের দুজনকে নানা কথা-বার্তার পর ‘অশ্লীল’ গান ছেড়ে নাচাতে বাধ্য করেন সিনিয়র আপুরা। এ ছাড়াও রাত একটা পর্যন্ত নানা প্রসঙ্গ টেনে তাদের মানসিক নির্যাতনও করা হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আয়েশা রিজু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের সব বক্তব্য সত্য। গত ২৫ অক্টোবর আমি আমার মায়ের পর বাবাকে হারাই। আমি সেই ট্রমা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমার সেমিস্টার ফাইনাল চলছে। এ অবস্থায় এই ধরনের অমানবিক নিপীড়নের শিকার হয়ে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অমানবিক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি এবং এমন ঘটনা অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে যেন না ঘটে তার নিশ্চয়তা চাই।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জুলি মারমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দুই রুমের মধ্যে ভালো সম্পর্ক। আমরা নেচে গেয়ে সব কাজ একসঙ্গে করি। তবে রিজুর আচরণটা অনেক আগে থেকেই অ্যাবনরমাল ছিল। সে যথেষ্ট ইগোয়েস্টিক মেয়ে। রিজুর রুমে আমার কয়েকজন বান্ধবী থাকে। গতকাল সেই রুমে গিয়ে আমরা বলিউড গানে নাচানাচি করছিলাম। সেখানে রিজু এবং তার অন্য এক সহপাঠীও ছিল। তারা আমাদের নাচ এনজয় করছিল। একপর্যায়ে তাদেরকে আমরা ডেকে বলেছি, তোদের সামনে সিনিয়র আপুরা নাচতেছে তোরা কেন জয়েন করছিস না।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জান্নাত নিপু এবং পূজা দাসকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘অভিযোগপত্রটি প্রাধ্যক্ষ মহোদয় বরাবর পাঠিয়েছি। বিষয়টি এখন তিনি দেখছেন।’
তবে, সার্বিক বিষয়ে জানতে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জিনাত হুদাকে বিকাল পাঁচটা এবং সন্ধ্যা সাতটায় দুইবার ফোন দিলে তিনি দুইবারই ফোন কেটে দিয়েছেন।