আশরাফুল একজন তরুণ ব্যবসায়ী। থাকেন রাজধানীর শ্যামলীর আদাবরে। করযোগ্য আয় থাকায় তাকে রিটার্ন জমা দিতে হয়। প্রতিবছর ‘আয়কর মেলায় রিটার্ন জমা দেন তিনি।
এবার ‘আয়কর মেলা’ না হলেও করদাতাদের যেন ভোগান্তিতে পড়তে না হয়, সে জন্য কর অঞ্চলেই একই রকম সুবিধা দিতে মেলার আয়োজন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বুধবার দুপুরে আশরাফুল এসেছেন নিজের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে ।
রাজধানীর কর অঞ্চল- ১৩ এর করদাতা আশরাফুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে কোনো ঝক্কি–ঝামেলা নেই। অপেক্ষা করতে হয় না। সমস্যা হলে হেল্প ডেস্ক রয়েছে। ফরম পূরণে কর্মকর্তারা সহায়তা করেন। সহজেই রিটার্ন জমা দেয়া যায়। তাই কর অঞ্চলে এসেছি।’ ২০১৭ সাল থেকে আয়কর রিটার্ন জমা দেন আশরাফুল।
আশরাফুলের মতো অনেক করদাতাই এখন ভিড় জমাচ্ছেন রাজধানীর কর অঞ্চলগুলোতে শুরু হওয়া মেলায়। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর অঞ্চলে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার আগ্রহ বাড়ছে।
প্রত্যেক কর অঞ্চলে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ রিটার্ন জমা পড়ছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচা কর অঞ্চল-১ এর কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, প্রতিদিনই রিটার্ন জমার সংখ্যা বাড়ছে। তবে শেষের দিকে অনেক ভিড় হয়।
এনবিআরের অধীনে ঢাকাসহ সারা দেশে ৩৩টি কর অঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি। এসব অঞ্চলে করদাতাদের সেবা দেয়া হচ্ছে।
জনগণকে কর জমা দিতে উৎসাহিত করতে ২০১০ সাল থেকে দেশব্যাপী আয়কর মেলার আয়োজন করে আসছে এনবিআর।
করোনার কারণে মাঝখানে গত দুই বছর আয়কর মেলা বন্ধ রেখেছে এনবিআর। তার পরিবর্তে মেলার আবহে কর অঞ্চলে রিটার্ন জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়, যা গত ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়। চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
৩০ নভেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস। ওই দিনই ব্যক্তি পর্যায়ে (শ্রেণি) আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার শেষ দিন।
আরেফিন জাহানের পেশা শিক্ষকতা। রাজধানী কর অঞ্চল-৮ এর করদাতা তিনি। বুধবার সেগুনবাগিচায় কর অফিসে রিটার্ন জমা দিতে এসেছেন তিনি।
নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের এই শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, এখানে এসে তার ভাল লাগছে। সহজেই রিটার্ন জমা দিতে পেরে খুশি তিনি।
তবে আয়কর মেলা হলে ভালো হতো। কারণ, কীভাবে ফরম পূরণ করতে হয়, ডিসেপ্লের মাধ্যমে তা দেখানো হয়। এ ছাড়া মেলায় করের টাকা জাম দেয়ার জন্য ব্যাংকের বুথ থাকে। এখানে তা নেই।
ব্যক্তির আয় থাকুক আর না থাকুক, আইনে বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। যথাসময়ে রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানাসহ সুদ গুনতে হয়। তবে নির্ধারিত সময় পার হলেও সময় চেয়ে আবেদন করা যায়।
বর্তমানে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন রয়েছে এমন লোকের সংখ্যা ৬৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু বার্ষিক রিটার্ন জমা দিয়েছেন মাত্র ২৫ লাখ।
যেসব সেবা দেয়া হচ্ছে
আপনার করযোগ্য আয় থাকলে আপনাকে বিনা মূল্যে একটি ফরম, ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার জন্য চালান বিতরণ করা হবে। নিজে ফরম পূরণ করতে কোনো অসুবিধা হলে হেল্প ডেস্কের সহায়তা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
রিটার্ন জমা দেয়া করদাতাদের তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি স্বীকারপত্র এবং তার সঙ্গে রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহ দিতে উপহারসামগ্রী দেয়া হয়।
সব সেবাকেন্দ্রে নতুন ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন ও রি-রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ফরম, পরিপত্র, রিটার্ন পূরণের নির্দেশিকাও সরবরাহ করা হয়।
কর অঞ্চলগুলোর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রচার-প্রচারণাও অব্যাহত রাখা হচ্ছে।
কর অঞ্চল-৪-এর ব্যবস্থাপনায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সচিবালয় ও অফিসার্স ক্লাবের সদস্যদের জন্য অফিসার্স ক্লাবে রিটার্ন জমা নেয়া হচ্ছে।
প্রচলিত প্রথায় আয়কর রিটার্ন জমার পাশাপাশি অনলাইনে সেবা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এনবিআরের সাময়িক তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার জন অনলাইনে সেবা নিয়েছেন।