নিষেধাজ্ঞার পর ইলিশের আকালে এবার মৌসুমটা ভালো কাটেনি দক্ষিণের জেলেদের। তবু পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে ট্রলারে সাগর পাড়ি দেন তারা। কাঙ্ক্ষিত মাছ পেতে দিনের পর দিন সাগরেই ভাসতে থাকেন তারা।
বরগুনার পাথরঘাটার জেলে মো. মুছাও স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে রেখে এক সপ্তাহ আগে অন্য জেলেদের সঙ্গে সাগরে যান। সবাই ভেবেছিলেন, ট্রলারভর্তি মাছ নিয়ে হাসি মুখে ফিরবেন।
ফিরলেন বটে, তবে মুখে হাসির বদলে আতঙ্ক আর চাপাকান্না সবার। কারণ ট্রলারে মাছ নয়, জেলেরা নিয়ে এলেন মুছার মরদেহ।
ইলিশ ধরে বরগুনার পাথরঘাটা ফেরার পথে মান্দারবাড়িয়া এলাকায় ভারতীয় ডাকাতদের কবলে পড়ে মুছাদের ট্রলার। ডাকাতদের গুলিতে প্রাণ হারান মুছা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
৩০ বছর বয়সী মুছা পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের চরলাঠিমারা গ্রামের হারুন মিয়া ছেলে। ট্রলারমালিক বাবুল তার চাচা।
মরদেহ নিয়ে এফবি বাবুল নামে ট্রলারটি বুধবার ভোর ছয়টার দিকে পাথরঘাটা লঞ্চঘাট এলাকায় নোঙর করে।
স্বামীর মরদেহ ট্রলার থেকে নামানো হলে বিলাপ করতে করতে লুটিয়ে পড়েন আয়শা বেগম। চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘ওরে তোমরা মাছের বদলে মোর স্বামীর লাশটা লইয়া আইলা। মোর পোলাডারে মুই এহন কী কমু?’
মায়ের কান্না দেখে ৭ বছরের তাওহিদের প্রশ্ন, ‘আম্মা তুমি কান্দ ক্যা, বাবার কি অইছে?’ উত্তর দিতে গিয়ে কণ্ঠ জড়িয়ে আসায় থেমে যান আয়শা।
আয়শার বাবা হারুন মিয়া ও অন্য স্বজনরা জানালেন, মুছার উপার্জনেই চলত পরিবার। এখন শিশুসন্তানকে নিয়ে আয়শা কীভাবে চলবেন, এ নিয়ে শঙ্কিত তারা। মুছা হত্যার বিচার পাবেন কি না তাও জানেন না।
পুলিশ গিয়ে মুছার মরদেহ পাথরঘাটা থানায় নিয়ে যায়। সেখানে সুরতহাল শেষে বেলা ১১টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী জানান, ইলিশ শিকার শেষে পাথরঘাটা ফেরার পথে মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে বঙ্গোপসাগরের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় ভারতীয় ডাকাতের গুলিতে নিহত হন মুছা।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হামলার শিকার জেলেরা জানিয়েছেন, ডাকাত দল ভারতীয়। তারা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে আমাদের ট্রলারের জেলেকে গুলি করে হত্যা করে মালামাল লুটে নিয়েছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।’
ট্রলারমালিক বাবুল মিয়া জানান, একটি ট্রলারে ভারতীয় ২০ থেকে ৩০ জন ডাকাত এসে তার ট্রলারে হামলা চালায়। মুছা বাধা দিলে তাকে লক্ষ্য করে ডাকাত দল গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। অন্য জেলেদের মারধর ও জিম্মি করে ট্রলারের জাল ও মাছ লুটে নেয়। যাওয়ার সময় ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ খুলে বিকল করে রাখে।
বাবুল আরও জানান, জেলেরা পরে ইঞ্জিন মেরামত করে সকাল ছয়টায় ট্রলার নিয়ে পাথরঘাটা লঞ্চঘাট এলাকায় পৌঁছান।
পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার বলেন, ‘ঘটনাস্থল মোংলা থানার আওতাধীন। যে কারণে এখানে মামলা নেয়ার আইনগত বিধি নেই আমাদের। আমরা ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করব। পরে পরিবার মোংলা থানায় মামলা করবে। আমরা মুছার পরিবারকে সব রকমের আইনগত সুবিধা দিয়ে সহায়তা করব।’