বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কম স্মরণশক্তির মানুষ ‘বেশি বুদ্ধিমান’

  •    
  • ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ১৮:১১

গবেষণা বলছে, অফিসে যাওয়ার সময় বাসার চাবি ভুল করে ফেলে আসা কিংবা সঙ্গিনীকে নিয়ে ঘোরার পরিকল্পনা কাজের চাপে ভুলে বসে থাকা প্রমাণ করে, আপনি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি বুদ্ধিদীপ্ত!

ক্লাসে ‘ব্যাকবেঞ্চার’ হিসেবে পরিচিতদের হাজার বার পড়িয়েও মগজে বই ঢোকাতে ব্যর্থ হন শিক্ষক। পাঠ্যবইয়ের পাতা হরদম ভুলে বসে থাকা এসব শিক্ষার্থীকে নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই অভিভাবকেরও। সন্তানের এমন দশায় সমাজে ‘মুখ দেখাতেও’ সংকোচে ভোগেন অনেকে।

ভুলো মন নিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদেরও বিব্রতবোধের শেষ নেই। ঘর থেকে বাইরে অহরহ হাসি-তামাশার শিকার হন তারা।

তবে গবেষণা বলছে, পড়া মুখস্ত রাখতে না পারা সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আবার ক্ষণে ক্ষণে কাজের কথা ভুলে যাওয়াও লজ্জার বিষয় নয়। বরং এই ভুলো মন প্রমাণ করছে, আপনার মস্তিষ্ক পাশের জনের চেয়ে ‘সুপার অ্যাকটিভ’। আপনার ক্ষুরধার মাথার ধারেকাছেও নেই উপহাসকারীরা।

কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টোর ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োলজিকাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক ব্লেক এ. রিচার্ডস এবং একই ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অফ সাইকোলজির অধ্যাপক পল ডাব্লিউ ফ্রাঙ্কল্যান্ড মানুষের মস্তিষ্কের স্মরণশক্তি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাদের গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে মস্তিষ্কবিজ্ঞান সংক্রান্ত জার্নাল নিউরন-এ।

এই দুই গবেষক বলছেন, বিভিন্ন তথ্য ভুলে যাওয়ার ঘটনায় বিব্রত হওয়ার কিছু নেই, বরং তুচ্ছ অনেক বিষয় ভুলে যাওয়াই ‘বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিষ্কের’ লক্ষণ।

ফলে অফিসে যাওয়ার সময় বাসার চাবি ভুল করে ফেলে আসা কিংবা সঙ্গিনীকে নিয়ে ঘোরার পরিকল্পনা কাজের চাপে ভুলে বসে থাকা প্রমাণ করে, আপনি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি বুদ্ধিদীপ্ত!

ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টোর দুই গবেষক বলছেন, একজন ব্যক্তির অনেক বেশি স্মরণ ক্ষমতা একটি ‘সাধারণ মানের’ মস্তিষ্কের প্রমাণ দেয়, অন্যদিকে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা ‘উচ্চ এবং ব্যতিক্রমী’ বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।

ব্যাখ্যা দিয়ে তারা বলছেন, মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি প্রধানত সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য ভালোভাবে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। মস্তিষ্ক তখনই ভালোভাবে ব্যবহার সম্ভব যখন সেটি কম কিন্তু সুনির্দিষ্ট কাজে নিয়োজিত থাকে। ফলে যারা নিজেদের মগজে এলোমেলো অনেক তথ্য জমা রাখেন তারা আসলে কোনো কাজেই সুনিপুণ নন।

অধ্যাপক ব্লেক বলছেন, ‘এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, সক্রিয় মস্তিষ্ক অপ্রাসঙ্গিক অনেক বিবরণ ভুলে যায় এবং এর পরিবর্তে এমন বিষয়ে মনোযোগ দেয় যা বাস্তব জগতে মানুষকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।’

ফলে শপিংমলে সদ্য পরিচিত তরুণীর সঙ্গে ফোন নম্বর বিনিময় করতে ভুলে গেলেও আক্ষেপ কিছু নেই। বরং ভাবতে পারেন এই ভুলের অর্থ হলো, আপনার মগজ তখন ফোন নম্বর বিনিময়ের চেয়ে তরুণীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতেই বেশি মনযোগ দিয়েছিল!

অনেকে ভুলো মন ঠিক করতে বিভিন্ন ব্যায়ামের আশ্রয় নেন। অধ্যাপক ব্লেক বলছেন, ‘এতে মগজের হিপ্পোক্যাম্পাসে নিউরনের সংখ্যা বাড়ে, তবে এতে বাস্তব জীবনে খুব একটি লাভ নেই, বরং স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া আরও কঠিন করে তোলেন।’

মস্তিষ্ক কীভাবে ঘটনাকে উপলব্ধি করে

গবেষকেরা বলছেন, আমাদের মস্তিষ্ক কোনো ‘ঘটনাকে’ নিছক ঘটনা হিসেবে উপলব্ধি করতে পারে না, এটি ঘটনাগুলোর একটি সাধারণ ছবি বা কিছু সরল তথ্যের সংস্করণ তৈরির দিকে মনোযোগ দেয়। আর এর ভিত্তিতেই পরে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নেয়ার উপায় খুঁজে নেয় মস্তিষ্ক।

আপনি যখন বিভিন্ন ‘ঘটনা’ ভুলতে শুরু করেন তখন মস্তিষ্ক সেখান থেকে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য মনের মাঝে সাধারণ চিত্র হিসেবে যুক্ত করে এবং এভাবে বাস্তবতা সম্পর্কে প্রখর উপলব্ধি গড়ে ওঠে।

অতি সহজলভ্য তথ্য যা চাইলেই গুগল করে জানা সম্ভব অথবা ফোনের ডেটা স্টোরেজে পাওয়া যায়, সেগুলো স্বাভাবিকভাবেই মস্তিষ্ক আর মনে রাখতে চায় না। এর পরিবর্তে ‘অপ্রয়োজনীয়’ তথ্যভান্ডার খালি করে সেখানে ‘প্রয়োজনীয়’ তথ্য সংরক্ষণের চেষ্টা করে।

সর্বোপরি, মস্তিষ্ক বিদ্যমান তথ্যগুলোকে মাঝেমধ্যেই পুনর্বিন্যাস করে যাতে বিশেষ পরিস্থিতিতে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে এটি আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারে।

আর তাই মনভোলা কেউ ধরে নিতেই পারেন তার মাথার মগজ ভালোভাবেই কাজ করছে। তবে নিজেকেও ভুলতে শুরু করলে কিন্তু সাবধান। বেশি বেশি কোনো কিছুই ভালো না, আর তাই সব ভুলতে শুরু করলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার বিষয়টি কিন্তু মোটেই ভোলা যাবে না।

এ বিভাগের আরো খবর