বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পূর্ণাঙ্গ রায়ে নেই ‘৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নেয়ার’ নির্দেশনা

  •    
  • ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ১৭:১৮

বিচারক লিখেছেন, ‘যৌনজীবনে অভ্যস্ত প্রাপ্তবয়স্ক অনেক নারী এখানে বিচারের জন্য আসেন, যেখানে দেখা যায় কথিত ঘটনার অনেক দিন পর তাদের মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর ওপর যৌন সহিংসতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। মামলা করার সময় বিষয়টিতে নজর রাখা হলে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হলে, ধর্ষণের যে কোনো ধরনের নমুনা যথাযথভাবে পাওয়া গেলে এবং ফরেনসিক পরীক্ষায় সেগুলো প্রমাণ হলে, তা ধর্ষণ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে গ্রহণ করা যায়।’

আলোচিত রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলায় বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের দেয়া রায়ের লিখিত কপি প্রকাশিত হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পরে মামলা না নিতে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়ার কোনো উল্লেখ নেই।

আলোচিত ওই ধর্ষণ মামলার লিখিত রায় মঙ্গলবার রাতে প্রকাশ হয়। বিচারক কামরুন্নাহারের স্বাক্ষরসহ পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টে।

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে চার বছর আগে দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় গত ১১ নভেম্বর রায় দেন কামরুন্নাহার। সে সময় তিনি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক ছিলেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ের লিখিত কপিতেও কামরুন্নাহার সই করেন ১১ নভেম্বর।

রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেয়া হয়। তারা হলেন, আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন।

রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আক্রান্ত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল টেস্ট করা না হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। এতে মামলা প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে।

ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর এ সংক্রান্ত মামলা না নিতে কামরুন্নাহার মৌখিক পরামর্শ দেন বলেও সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।

বিচারক কামরুন্নাহারের এমন মন্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে গত রোববার প্রধান বিচারপতি তার বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করেন। এছাড়া তাকে ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রত্যাহার করে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়।

তবে ৫০ পৃষ্ঠার লিখিত রায়ে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশকে মামলা না নিতে বিচারক কামরুন্নাহারের কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

ইংরেজিতে লেখা পূর্ণাঙ্গ রায়ে সুনির্দিষ্টভাবে মামলাকারী তরুণীদের ‘যৌনকাজে অভ্যস্ত’ বলেও মন্তব্য করা হয়নি।

ট্রাইব্যুনাল বহু ধর্ষণ মামলা দেখেছেন উল্লেখ করে বিচারক লিখেছেন, ‘যৌনজীবনে অভ্যস্ত প্রাপ্তবয়স্ক অনেক নারী এখানে বিচারের জন্য আসেন, যেখানে দেখা যায় কথিত ঘটনার অনেক দিন পর তাদের মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর ওপর যৌন সহিংসতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। মামলা করার সময় বিষয়টিতে নজর রাখা হলে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হলে (বহু মামলায় চিকিৎসকেরা যেমন মতামত দিয়েছেন), ধর্ষণের যে কোনো ধরনের নমুনা যথাযথভাবে পাওয়া গেলে এবং ফরেনসিক পরীক্ষায় সেগুলো প্রমাণ হলে, তা ধর্ষণ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে গ্রহণ করা যায়।

‘তখন ধর্ষণ মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তির বিচার এবং ন্যায়বিচার সর্বোত্তমভাবে করা সম্ভব।’

রেইনট্রি মামলার দুই বাদীর বিষয়ে বিচারক কামরুন্নাহার লিখেছেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক দুই ভুক্তভোগীর মেডিক্যাল পরীক্ষা যদি ঘটনার পরপরই হতো অথবা যত দ্রুত সম্ভব করা হতো, তাহলে বিচারের ক্ষেত্রে ধর্ষণের আলামত পাওয়া সম্ভব হতো। এমনকি তারা ঘটনার পরপরই বা ওই দিনই মামলা করলে পুলিশ তাদের মুখ, গাল বা শরীরের অন্য কোনো অংশে যৌন সহিংসতার আলামত চিহ্নিত করতে পারত। আর বিচারের ক্ষেত্রে সেগুলো হতো নথিভুক্ত প্রমাণ।’

ঘটনার ৩৮ দিন পর মামলা হওয়ায় এবং পারিপার্শ্বিক প্রমাণের অভাবে অভিযোগের সত্যতা আদালতে প্রমাণ করা যায়নি বলেও রায়ে উল্লেখ করেন বিচারক কামরুন্নাহার।

বিচারক লিখেছেন, ‘বাদীরা প্রথমে মামলা করতে যাননি। বরং ঘটনার দীর্ঘ সময় পর সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা তার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করাতে বাদীদেরকে নিয়ে যান। এতে প্রমাণ হয় মামলাটি সাজানো।

‘এছাড়া বাদীপক্ষের উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণে রয়েছে অসঙ্গতি, অসামঞ্জস্যতা, যেটি ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে না। এটি মামলাটির গোড়ায় আঘাত করেছে।’

রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও লিখিত রায়ে উল্লেখ করেন বিচারক।

রায়ের আদেশ অংশে তিনি লিখেছেন, ‘অভিযুক্ত সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিব, বিল্লাল হোসেন ও রহমত আলীর বিরুদ্ধে অপরাধের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যে কারণে তাদেরকে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১)/৩০ ধারায় অপরাধ থেকে খালাস দেয়া হলো।’

এ বিভাগের আরো খবর