বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ানো বাবাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে ৫ বছরের মেয়ে ফাহিমাকে হত্যা করা হয় বলে দাবি করেছে র্যাব। ছায়া তদন্ত শেষে প্রমাণ পাওয়ায় আমির হোসেনসহ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা।
কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন সংস্থার আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, আমির হোসেন নিজের বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক ধামাচাপা দিতে সহযোগীদের নিয়ে সন্তান ফাহিমাকে খুন করেন। এ বিষয়ে অভিযুক্তরা প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
কুমিল্লার দেবিদ্বার ও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে ফাহিমার বাবা আমির হোসেন, তার সহযোগী রবিউল আউয়াল, রেজাউল ইসলাম ইমন, লাইলি আক্তার ও সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১১।
খন্দকার মঈন বলেন, ‘আমির হোসেনের সঙ্গে এক নারীর বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। ৫ নভেম্বর ওই নারী ও আমির হোসেনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে মেয়ে ফাহিমা। এতে তারা দুজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরের দিন ওই নারীর প্ররোচনায় সহযোগীদের নিয়ে মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আমির।’
মেয়েকে হত্যার অভিযোগে বাবাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর ব্রিফিং করে র্যাব। ছবি: সংগৃহীত
ফাহিমাকে হত্যার উদ্দেশে ৭ নভেম্বর ছুরি, প্লাস্টিকের বস্তা সংগ্রহ করে বিকেলে তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হন আমির। দেবিদ্বারের চাঁপানগর রাস্তার মোড়ে সোহেল রানার অটোরিকশায় করে আমির হোসেন ও তার সহযোগীরা ফাহিমাকে নিয়ে রওনা হয়। বিভিন্ন স্থানে ঘুরে সন্ধ্যায় তারা দেবিদ্বার পুরান বাজারের দক্ষিণে একটি নদীর পাড়ে নির্জন স্থানে ফাহিমাকে নিয়ে যান। সেখানে অভিযুক্ত নারীও উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই ফাহিমাকে গলা টিপে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় বলে জানায় র্যাব।
খন্দকার মঈন জানান, হত্যার পর ঘটনাস্থলের আশপাশে লোকজনের চলাচল দেখে ফাহিমার লাশটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে অটোরিকশায় করে ফিরে আসেন অভিযুক্তরা। তারা লাশটি রেজাউল ইসলাম ইমনদের গোয়ালঘরে একটি ড্রামের ভিতরে লুকিয়ে রাখেন।
৯ নভেম্বর রাতে তারা লাশটি উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর নজরুল মাস্টারের বাড়ির সামনে কালভার্টের নিচে ডোবার পানিতে ফেলে আসেন। পরে ১৪ নভেম্বর পুলিশ শিশু ফাহিমার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। তখন ফাহিমার বাবা আমির হোসেনই মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
খন্দকার মঈন জানান, হত্যার পর ফাহিমাকে বিকেল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে সবাইকে জানান আমির হোসেন। পরে তিনি দেবিদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ফাহিমার খোঁজে এলাকায় মাইকিং ও ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁকও করান আমির।
ফাহিমার লাশ উদ্ধারের পর দেবিদ্বার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন আমির হোসেন। মেয়ের হত্যার বিচার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিভিন্ন পোস্ট দেন।