বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের কালিগঞ্জ নৌ-থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ভোলার জেলেদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অহেতুক আটকে রাখা, বৈধ জালকে অবৈধ বলে বিক্রি, মাসিক চাঁদা আদায়সহ বিস্তর অভিযোগ এনেছেন তারা।
জেলেরা জানান, নৌ-পুলিশের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে নদীতে মাছ ধরতে বাধা দেয়ার হুমকি দেয় কালিগঞ্জ নৌ-থানা পুলিশ। ওই থানা এলাকার মাঝিদের দিয়ে ভোলার জেলেদের হুমকি দেয়া হয়। এমনকি জলদস্যু বলে বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুক নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
ভোলার জেলে মো. সবুজ বলেন, ‘আমরা নদীতে যাইয়্যা বৈধ জাল বাইতেছি। জাল ফালাইছি, আমাদের ভোলার আওতার ভিতরে জাল ফালাইয়্যা বইয়্যা রইছি। হেরা আইছে (নৌ-পুলিশ), আইয়া আমাগো লগে কথা নাই বাতি নাই, আমাদের জাল ধইরা টানা ধরছে, জাল টাইন্না নৌ-পুলিশে নিয়া গেছে।
‘জাল নিয়া যাওয়ার পর তারা (নৌ-পুলিশ) আমাগোরে বলে তোমরা টাকাপয়সা নিয়া আসো, তোমাদের জাল দিয়া দিমু। আমরা টাকাপয়সা নিয়া গেছি। হেরা আমাগোরে ঘুরাইয়া রাইতের ১১টা পর্যন্ত রাখল। বওইয়্যা রাইখ্যা কোনো জালপাল দিলো না। জাল চাইলে আমাগো হুমকি দেয়।’
সবুজ আরও বলেন, ‘নৌ-পুলিশ দিছে সরকার গাঙ্গে নিরাপত্তার জন্য, আমরা বাই বৈধ জাল, সরকার অভিযান দেয়, আমরা অভিযান পালন করি। এখন কোনো অভিযান নাই, আমাগো সান্দি জাল হলো বৈধ। এখন আমরা মাছ ধরতাছি। এখন নৌ-পুলিশ যদি এইসব করে গাঙ্গে, তাহলে তো আমরা নদীতে মাছ ধরতে পারুম না। নৌ-পুলিশের হাত থেকে কীভাবে বাঁচতে পারি সে জন্য সরকারের কাছে আমাদের আবেদন।’
মেঘনা নদীতে ২৬ বছর ধরে মাছ ধরে আসছেন জেলে মহাসিন। তিনি বলেন, ‘নদীতে নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে সরকার পুলিশের মধ্যে থেকে নৌ-পুলিশ নামে একটি আলাদা বাহিনী করে দিয়েছে। এই বাহিনীর কাজ হলো নদীতে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধ দমন। অসাধু নৌ-পুলিশ কর্মকর্তাদের হয়রানি ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মেঘনা-তেঁতুলিয়ার জেলেরা।’
‘নদী থেকে বৈধ জাল তুলে আনা, জেলেদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি, চোর-ডাকাত বানিয়ে নিরীহ জেলেদেরকে হয়রানি করছেন নৌ-পুলিশ সদস্যরা।’
ছগির মাঝি, মহাসিন মাঝিসহ অনেক জেলে অভিযোগ করে বলেন, ‘গত শুক্রবার জেলেরা নদীতে বৈধ জাল ফেলে মাছ ধরতে যায়। হঠাৎ নৌ-পুলিশের কয়েক সদস্য ও তাদের সোর্স ফারুক জমাদ্দার ও সবুজ জমাদ্দার এসে ১০ জেলের জাল অবৈধ বলে উঠিয়ে নিয়ে যান।
‘জাল নিয়ে গিয়ে সোর্সের মাধ্যমে জেলেদেরকে নৌ-পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। জেলেরা তাদের কাছে গেলে জাল ছাড়িয়ে নিতে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। জেলেরা ধারদেনা করে টাকা জোগাড় করে জাল ছাড়িয়ে নেয়। যারা টাকা দিতে পারেনি তাদের জাল বিক্রি করে দেন নৌ-পুলিশ সদস্যরা। কিছু জাল পুড়েও ফেলা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ নৌ-থানার ওসি ফারুক বলেন, ‘নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। নদীপথ সুরক্ষার জন্য নৌ-পুলিশ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। নদীতে কিছু অসাধু জেলে অবৈধ জাল ব্যবহার করে মাছের বংশ শেষ করে দিচ্ছে। অবৈধ জাল ধরলে তারা এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করে বেড়ান।’
তিনি বলেন, ‘কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে জাল ধরে বিক্রির অভিযোগ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভোলা সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা জামাল হোসেন বলেন, ‘নৌ-পুলিশ জেলেদের জাল নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে জেলেরা কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রশাসনিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। নৌ-পুলিশ জেলেদের জাল অবশ্যই মৎস্য অফিসের প্রতিনিধি নিয়ে ধরতে হবে। তারা ইচ্ছেমতো জাল ধরতে পারে না বলে আমি মনে করি।’