বাংলাদেশের আর্থিক খাতে অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধি দল। সফরকালে তারা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবে।
আর্টিক্যাল মিশন-৪ নামে পরিচিত প্রতিনিধি দলটি আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন আইএমএফের উন্নয়ন বিষয়ক সহকারী পরিচালক রাহুল আনন্দ।
আর্থিক খাতের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে প্রতিবছরই বাংলাদেশে আসে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। তবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে মাঝের দু’বছর তাদের কোনো সফর ও বৈঠক হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এবার আইএমএফ মিশন সফরে আসছে। এর আইএমএফ সবশেষ বাংলাদেশ সফর করে ২০১৯ সালে।
সফরকালে আইএমএফ প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে। এবারও উল্লিখিত সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইএমএফের আসন্ন সফরে বৈঠকে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় ব্যাংক খাতে সংস্কার, ভতুর্কি, রাজস্বসহ আর্থিক খাতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রাধান্য পাবে। পাশাপাশি বাজেটে অর্থায়ন, সামষ্টিক অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিও আলোচনায় উঠে আসবে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছর আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সফরকে সামনে রেখে বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য বাংলাদেশের ব্যাংক খাত আরও কীভাবে উন্নয়ন করা যায় তার একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছিল।
তাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনাসহ আর্থিক খাতকে গতিশীল করতে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। কিন্তু করোনার কারণে বৈঠক না হওয়ায় ওই পরিকল্পনা জমা দিতে পারেনি আইএমএফ। আগামী বৈঠকে ওই পরিকল্পনা উপস্থাপন এবং তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। এটিকে সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনার পক্ষে আইএমএফ।
ব্যাংক কোম্পানি আইনও আলোচনার এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকার ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়া তৈরি করেছে। এটিকে আরও যুগোপযোগী দেখতে চায় আইএমএফ।
খেলাপি ঋণ আদায়ের গতি ত্বরান্বিত করতে সরকার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন প্রায় চূড়ান্ত করেছে। এর কার্যকারিতা নিয়েও আলোচনা হবে।
প্রতিবছর বাজেটে কৃষি, রপ্তানি, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমাণ ভতুর্কি দেয়া হয়। এই ভতুর্কির বিরোধিতা করে আসছে আইএমএফ।
বাজেটে বর্তমানে যে পরিমাণ ভতুর্কি দেয়া হয় তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সাড়ে ৩ থেকে ৪ শতাংশ। এটি জিডিপির এক শতাংশের নিচে দেখতে চায় সংস্থাটি।
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার পক্ষে আইএমএফ। উদ্দেশ্য, বাজেটে ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা।
অধিক ব্যয়ের লক্ষ্য নিয়ে চলতি অর্থবছরে বিশাল ঘাটতি (৬ দশমিক ৩ শতাংশ) নির্ধারণ করে বাজেট ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম যে হারে বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে ঘাটতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অবশ্য সরকার সম্প্রতি জ্বালানি তেল বিশেষত ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এক লাফে লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, তেলের মূ্ল্যবৃদ্ধির সঙ্গে আইএমএফের শর্তের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতার আলোকেই জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে।
আইএমএফের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে দেশের রাজস্ব খাতে সংস্কারের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা আরও বাড়াতে এর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন দেখতে চায় আইএমএফ।
এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে করোনা টিকাদান কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে বৈঠকে।