সৌদির কার্যত শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) এর ‘মিডলইস্ট গ্রিন ইনিশিয়েটিভ’ বা মধ্যপ্রাচ্য সবুজায়ন প্রকল্পের অংশীদার হতে চায় বাংলাদেশ। ৫০ বিলিয়ন ডলারের এই মেগা প্রকল্পে বীজ, চারা ও দক্ষ জনবল সরবরাহ করতে চায় ঢাকা।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মঙ্গলবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই আগ্রহের কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গাছ লাগানোর বিশাল এক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে মরুর দেশ সৌদি আরব। বাংলাদেশ এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বন্ধু দেশটির পাশে থাকতে চায়। সেখানে আমাদের সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী কাজ করে। সৌদি আমাদের বন্ধু দেশ। স্বাধীনতার পর থেকে তারা আমাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে।
‘তারা বিশাল একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে মরুভূমি সবুজায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য সবুজায়নের নেতৃত্ব দিতে চায় তারা। বাংলাদেশ এই প্রকল্পে বীজ, চারা ও দক্ষকর্মী দিয়ে সহায়তা করতে চায়।’
অনুষ্ঠানে সৌদি আরবের ঢাকা রাষ্ট্রদূত এসা ইউসুফ আল দোহাইলি বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠন করছে তার দেশ। এর অধীনে সৌদি আরবে এক হাজার কোটি গাছ লাগানো হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
‘কার্বন নিঃসরণ কমানো, ভূমির ক্ষয় সহনীয় পর্যায়ে রাখতে দেশজুড়ে লাগানো হবে এক হাজার কোটি গাছ।’
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চায় রিয়াদ। পাশাপাশি ‘মিডলইস্ট গ্রিন ইনিশিয়েটিভ’ বা মধ্যপ্রাচ্য সবুজায়ন প্রকল্পের আওতায় আরব বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে আরও ৪ হাজার কোটি গাছ লাগানো হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে এই কার্যক্রমে যোগ দিয়েছে রিয়াদ। এটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম বন পুনরুদ্ধার কর্মসূচি। সামগ্রিকভাবে এই উদ্যোগের নাম দেয়া হয়েছে ‘মধ্যপ্রাচ্য সবুজায়ন প্রকল্প’।
সৌদির অর্থনৈতিক-সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়নে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১০ বছর মেয়াদি যে পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে, তার আওতায় এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান এমবিএস।
এক বিবৃতিতে সৌদি যুবরাজ বলেন, বিশ্বজুড়ে যে গতিতে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলগুলোর দ্রুত ও কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
কীভাবে বিশাল এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে সে বিষয়ে বিবৃতিতে কিছু জানাননি যুবরাজ।
পরিবেশের সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং মধ্যপ্রাচ্যে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ (উচ্চ তাপমাত্রা, অনাবৃষ্টি, বালুঝড় ও মরুভূমি) মোকাবিলায় সবুজায়নের দিকে নজর দিচ্ছে সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যে পাঁচ হাজার কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তারা।
এরমধ্যে এক হাজার কোটি গাছ লাগানো হবে সৌদি আরবে। বাকি চার হাজার কোটি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। তারই অংশ হিসেবে ‘সৌদি গ্রিন ইনিশিয়েটিভ’ এবং ‘মিডল ইস্ট গ্রিন ইনিশিয়েটিভ’ নামে দুটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার ঘোষণা আসে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে।
‘সৌদি গ্রিন ইনিশিয়েটিভ’ এর মাধ্যমে গাছের ঘনত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ, দূষণ ও ভূমির অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই, সামুদ্রিক পরিবেশে বিদ্যমান উদ্ভিদ, প্রাণী, অনুজীব রক্ষা করতে চান উদ্যোক্তারা। এজন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- এক হাজার কোটি গাছ লাগানো, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে অবদান রাখা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প চালু করা, যা ২০৩০ সালে বিদ্যুৎ চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ করবে।
আর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল ও বিশ্বের উন্নয়নে নেয়া হয়েছে মিডল ইস্ট গ্রিন ইনিশিয়েটিভ। উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য এ অঞ্চলে হাইড্রোকার্বন প্রযুক্তির দক্ষতা বাড়ানো ও চার হাজার কোটি গাছ লাগানো, যাতে বৈশ্বিক পর্যায়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমানো যায়।
সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতে প্রায় সর্বত্রই মরুভূমির প্রাধান্য। এসব দেশে পানির জোগানও একেবারেই কম। ফলে পানির চাহিদা মেটাতে এ অঞ্চলের অন্য দেশের মতো সৌদি আরবও সমুদ্রের পানি লবণমুক্ত করে পানযোগ্য করে তোলে। এজন্য দেশটি বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ব্যবহার করে, যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু সৌদি অর্থনীতিতে তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে চান মোহাম্মদ বিন সালমান। তাই গাছ লাগানোর উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সৌদি সরকারের এই প্রকল্প পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান বাড়াতে ভূমিকা রাখবে ও গাছের চারা রপ্তানিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে আনবে বলে মনে করে বাংলাদেশ।
ওই সূত্র নিউজবাংলাকে বলে, ‘ইতোমধ্যে আমরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার ও আরব আমিরাতে গাছের চারা, বাঁশের বেড়া ও খুঁটি রপ্তানি শুরু করেছি, কিন্তু তা পরিমানে কম। তবে সৌদি যুবরাজের প্রকল্পে শতশত কোটি চারা রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেড়া ও বাঁশ রপ্তানি করা যাবে। আবার গাছ লাগানো, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যায় হাজার হাজার লোকের প্রয়োজন হবে।’