প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) নিতে বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নেয়ার সমালোচনা করেছেন বিশিষ্ট ৩৬ নাগরিক। তাদের শঙ্কা, এই সিদ্ধান্তে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ওপর অযাচিত চাপ পড়বে। কোচিং বাণিজ্যের কারণে অভিভাবকদের ওপর আর্থিক চাপও বাড়বে।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইন-২০২১ শিক্ষার্থীদের কাঁধে বইয়ের বোঝা বাড়াবে এবং করোনার মতো মহাবিপর্যয়ের পর অভিভাবকদের কোচিং ও গাইডবইয়ের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় বাড়াবে।
সরকার হঠাৎ করে কেন এই সিদ্ধান্ত নিল, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিবৃতিতে একে আত্মঘাতী বলেও উল্লেখ করা হয়।
গত ৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সমাপনী পরীক্ষা পরিচালনার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইন-২০২১ এর খসড়া প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২০০৯ সাল থেকেই পঞ্চম শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এই পরীক্ষাকে শিক্ষাবিদরা অকারণ বলছেন। তাদের মতে, এতে শিশুদের ওপর চাপ বাড়ে, কিন্তু শিক্ষার মানে এর ভূমিকা নেই। এই পরীক্ষা বরং শিশুদেরকে মুখস্তনির্ভর করে তাদের সৃজনশীলতা কমায়।
বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের উপর থেকে পরীক্ষা ও বইয়ের বোঝা কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার প্রতিফলন ২০২১ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণীত ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখায়’ দেয়া যায়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) রাখা হয়নি। এটি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ নাগরিক সমাজের একটি অন্যতম প্রত্যাশিত বিষয় ছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনাকে আমলে না নিয়ে এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-কে পাশ কাটিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইন-২০২১’ এর খসড়া মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।
একে ‘শিক্ষানীতি ২০১০’ ও “জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১-এর” নীতি ও অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও বলেছেন তারা।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সেলিনা হোসেন, রামেন্দু মজুমদার, সুলতানা কামাল, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, হোসেন জিল্লুর রহমান, অধ্যাপক এম এম আকাশ, রাশেদা কে চৌধুরী।