উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হককে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কবরস্থানে তার স্ত্রীর পাশে দাফনের কথা থাকলেও সে সিদ্ধান্ত বদল করেছে পরিবার।
শিক্ষক, লেখক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিত্বসহ অন্যদের ইচ্ছায় পরিবারের সম্মতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তার দাফনের প্রস্তুতি চলছে।
তার আগে গুণী এই লেখকের জানাজা হবে মঙ্গলবার বাদ জোহর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে।
প্রয়াত হাসান আজিজুল হকের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ বকুল।
তিনি বলেন, ‘স্যারের মরদেহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারে রাখা হবে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। শ্রদ্ধা জানানো শেষে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’
সিদ্ধান্ত বদলের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্যারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোরস্থানে তার স্ত্রীর কবরের পাশে দাফনের কথা থাকলেও এখন নতুন সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেকের ইচ্ছায় ও পরিবারের সম্মতিতে তার দাফন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে করা হচ্ছে। সে প্রস্তুতিই চলছে।’
২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাসান আজিজুল হকের স্ত্রী শামসুন নাহার মারা যান।
একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে নিজ বাড়িতে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।
গত ২১ আগস্ট হাসান আজিজুল হককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হয়েছিল। সেখানে তাকে প্রথমে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সেই দিন রাতে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়।
চিকিৎসা শেষে গত ৯ সেপ্টেম্বর তিনি ফেরেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে নগরের চৌদ্দপায় এলাকার আবাসিক এলাকা ‘বিহাস’-এর নিজ বাড়ি ‘উজানে’।
হাসান আজিজুল হকের ছেলে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ইমতিয়াজ হাসান জানান, বাবা অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। মাঝে তাকে ঢাকায় নেয়া হয়েছিল। কিছুটা সুস্থ বোধ করায় তাকে আবারও রাজশাহীর বাসায় আনা হয়েছিল। কয়েক দিন ধরে বাবার শরীরটা ঠিক ভালো যাচ্ছিল না। সোমবার সন্ধ্যা থেকে অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল। রাত সোয়া ৯টার দিকে বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’
প্রয়াত এই সাহিত্যিকের এক ছেলে ও তিন মেয়ে।
হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে সাহিত্য অঙ্গনে। সহকর্মীকে হারিয়ে শোকাহত হয়ে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তার মৃত্যুর খবর শুনে রাতেই উজানে ছুটে যান রাবির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত অগণিত মানুষ।
হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন।
১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন।
হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে আগুনপাখি, একাত্তর করতলে ছিন্ন মাথা, নামহীন গোত্রহীন, আত্মজা ও একটি করবী গাছ, শামুক, দেশভাগের গল্প, সাবিত্রী উপাখ্যান।
গুণী এই লেখক একুশে পদক পান ১৯৯৯ সালে। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন বাংলা একাডেমি ও স্বাধীনতা পুরস্কার। তাকে ডি-লিট পুরস্কার দেয় আসাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।