দিল্লির মারাত্মক দূষণের মাত্র ১০ শতাংশ পাশের রাজ্যের খড়কুটো পোড়ানো জন্য হয়। রাজ্যের দূষণের ৭৪ শতাংশই হয় শিল্পাঞ্চল, ধুলাকণা ও যানবাহন থেকে। সোমবার রাজধানীতে বায়ু দূষণ সংকট সংক্রান্ত শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টকে এ কথা জানিয়েছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।
গত শুনানিতে কেন্দ্র ও রাজ্য- দুই সরকারের পক্ষ থেকেই বায়ুদূষণের জন্য পাশের রাজ্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষিজমিতে খড়কুটো পোড়ানোকেই দায়ী করা হয়েছিল।
ওই সময় শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘দূষণের কিছুটা খড়কুটো পোড়ানোর কারণে হলেও এর ওপরই পুরো দোষ চাপিয়ে দেয়া যায় না। দীপাবলিতে বাজি পোড়ানো, যানবাহন ও শিল্পাঞ্চলের দূষণও দায়ী। কৃষকদের দোষারোপ করা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।’
সোমবার শুনানির সময় দিল্লির রাজ্য সরকার জানায়, দূষণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেও তারা প্রস্তুত। তবে শুধু দিল্লিতে লকডাউন করলে দূষণে সীমিত প্রভাব পড়বে, তাই আশপাশের অঞ্চলেও কড়া লকডাউনের প্রয়োজন এমনটাই জানানো হয়েছে দিল্লি সরকারের হলফনামায়।
শনিবারই দিল্লির মাত্রাতিরিক্ত দূষণ নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের কাছে দূষণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন দিল্লি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণ লকডাউন করতে প্রস্তুত। তবে এই পদক্ষেপ তখনই সুফল দেবে, যখন সেটি দিল্লির পাশাপাশি এনসিআর অঞ্চলেও কার্যকর করা হবে।
‘শুধু দিল্লি শহরের আকার দেখে বলা যায়, সেখানে লকডাউন করলে, দূষণে তার প্রভাব সীমিতই থাকবে।’
যদি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বা বাতাসের গুণমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে অনুমতি দেয়া হয়, তবে দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে (এনসিআর) লকডাউন করতে রাজি রাজ্য সরকার, এমনটাই জানানো হয় শীর্ষ আদালতে।
গত শুনানিতে শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটি জানতে চাওয়া হয়েছিল। এদিন দিল্লি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দূষণের কথা মাথায় রেখে আগামী সাতদিন স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে, অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরকারি অফিসেও ১০০ শতাংশ বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বেসরকারি অফিসগুলোকে কর্মীদের ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সুযোগ দেয়া এবং গাড়ি ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দিল্লি সরকারের এই সমস্ত পদক্ষেপের প্রশংসাও করেছে শীর্ষ আদালত।
একইসঙ্গে সরকারি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার গাড়ি চলাচলে ফের একবার জোড়-বিজোড় পদ্ধতি চালু করতে পারে। এছাড়াও পাশের রাজ্যগুলো থেকে আগামী দুই দিনের জন্য ট্রাক চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে। এরপরও যদি দূষণ নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে সর্বাত্মক সিদ্ধান্ত হিসাবে সম্পূর্ণ লকডাউনের ঘোষণা করা হতে পারে।
এদিনের শুনানিতে শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে ধমক দিয়ে বলা হয়, “দিল্লিতে দূষণ ও তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজ্য সরকার ‘বোকা বোকা অজুহাত’ দিচ্ছে। এরকম চললে সুপ্রিম কোর্টকেই রাজ্য সরকারের রাজস্ব আদায় ও সেই টাকা দিয়ে কী করা হয়, তার পর্যালোচনা করতে হবে।”
প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা বলেন, ‘আমরা চাই দূষণের মাত্রা কমুক। আপনাদের প্রতিটা পদক্ষেপে পরামর্শ দেয়ার জন্য আমরা এখানে বসে নেই। কীভাবে শিল্পাঞ্চলে দূষণ ও যানজট নিয়ন্ত্রণ করবেন, সেটা আপনাদের সমস্যা।’
দিল্লি সরকারের জমা দেয়া হলফনামা নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘হলফনামার কথা ভুলে যান, আমাকে বলুন কী কী বড় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?’
শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারকে নতুন একটি হলফনামা জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এই হলফনামায় কোন কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা সম্ভব, কোন গাড়ির চলাচলে রাশ টানা যায় এবং কোন কোন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্ল্যান্টগুলি বন্ধ করা যায়, সে সম্পর্কে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত শুনানিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে সমাধান জানতে চাওয়া হয়েছিল, তার জবাবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা সম্পর্কেই উল্লেখ রয়েছে, এমনটাই জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। আপাতত কেন্দ্র ও রাজ্যকে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নীতি অনুসরণের নির্দেশই দিয়েছে শীর্ষ আদালত।