রাজধানী ঢাকার প্রবেশপথে চারটি বাস টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলো হওয়ার পর শহরে কোনো দূরপাল্লার বাস ঢুকতে পারবে না।
সম্প্রতি নিজের কার্যালয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস।
তিনি বলেছেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে নগরীর ওপর যানবাহনের চাপ কমাতে ঢাকার প্রবেশপথে চারটি আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ও বাস ডিপো স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলো হওয়ার পর কোনো দূরপাল্লার বাস রাজধানীতে ঢুকতে পারবে না।’
মেয়র তাপস বলেন, ‘আমরা বাস রুট র্যাশনালাইজেশন কর্মসূচির আওতায় বিরুলিয়ার বাটুলিয়া, সাভারের হেমায়েতপুর, কামরাঙ্গীরচরের তেঘরিয়া এবং সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুরে চারটি বাস টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। একবার টার্মিনালগুলো হয়ে গেলে আন্তজেলা বাসগুলোকে রাজধানীতে ঢোকার অনুমতি দেয়া হবে না, যা উল্লেখযোগ্যভাবে যানজট কমাতে সাহায্য করবে।’
সাক্ষাৎকারে ডিএসসিসির তীব্র যানজট নিরসনে সরকারের বহুপাক্ষিক উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় করে বিদ্যমান ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানান তাপস।
তিনি বলেন, ‘যানজট নিরসনে ডিএসসিসির গৃহীত উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে নৌ রুট পুনরুদ্ধার, নতুন সড়ক নির্মাণ, বিদ্যমান সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ৫৩টি চৌরাস্তা প্রশস্তকরণ, অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধন, বাস রুট র্যাশনালাইজেশন, রাস্তার অবৈধ দখলদার অপসারণ, পার্কিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত স্থান নিশ্চিত করা এবং আধুনিকায়নসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ।’
মেয়র বলেন, ‘রাজধানীর যানজট কমাতে আমরা সরকার ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তিনি জানান, কালুনগর থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ পর্যন্ত ছয় লেনের রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ এবং এ জন্য একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
বাম লেন প্রশস্ত করে এবং বিদ্যমান ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে ৫৩টি চৌরাস্তা উন্নয়নের ব্যবস্থা নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন মেয়র।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইন্টারনেট অফ থিংস ট্রাফিক সিস্টেম বাস্তবায়ন করছি।’
মেয়র বলেন, ‘ডিএসসিসি রাজধানীতে যানবাহনের চাপ কমাতে রাজধানীর আশেপাশের নৌরুটগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে এগুলোকে চলাচলের উপযোগী করে তোলার পাশাপাশি নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডকে ঘিরে একটি সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ চলছে।’
ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ‘আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ১২০টি বাস নিয়ে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে বিআরআর ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছি। বিআরআর সিস্টেমের সফল পরীক্ষা চালানোর পর ৪২টি রুটে নয়টি ক্লাস্টারে ২২টি কোম্পানির অধীনে বাস চলবে।’
নতুন ১৮ ওয়ার্ডে চার লেন সড়কের পরিকল্পনা
মেয়র তাপস বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সম্ভাব্যতা যাচাই করে নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের (ডিএসসিসি) খাল-নদীর পাশে চার লেনের সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।’
তিনি জানান, স্বল্প দূরত্বের গন্তব্যে হেঁটে যাওয়া লোকদের অনুপ্রাণিত করতে হাঁটার উপযোগী করে ফুটপাথ প্রশস্ত করা হবে।
নতুন রূপে সাজবে ফ্লাইওভারের নিচ
মেয়র তাপস জানান, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে তিনটি ফ্লাইওভারের নিচের জায়গাগুলোকে নতুন করে সাজাতে পাঁচ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ফ্লাইওভারের নিচের জায়গাগুলোতে অবৈধ দখলও নগরীর যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা যেকোনো উপায়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করব।’
মেয়র বলেন, ‘শহরের রাস্তায় রিকশা, ভ্যান গাড়ির মতো প্রায় সাত লাখ অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করছে, যা যান্ত্রিক যানবাহনের পাশাপাশি শহরের যানজট সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
‘আমরা ৩৪ বছর পর অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধন ও তাদের লাইসেন্স নবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৬ হাজার অযান্ত্রিক যানবাহন ইতোমধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে এবং তাদের ডিজিটাল নম্বর প্লেট দেয়া হয়েছে।’
তিনি জানান, ডিজিটাল নম্বর প্লেট ছাড়া কোনো অযান্ত্রিক যানবাহনকে নগরীর রাস্তায় চলাচলের অনুমতি দেয়া হবে না।
মেয়র বলেন, ‘নগরীর প্রধান সড়কে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়। সেই গাড়িগুলোর আলাদা পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছি এবং কাউকে অনির্ধারিত জায়গায় তাদের গাড়ি পার্ক করার অনুমতি দেয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘সার্বিক সড়ক ব্যবস্থাপনায় রদবদল করতে ডিএসসিসির নেয়া সংশোধিত কৌশলগত পরিকল্পনা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’
মেয়র বলেন, ‘ব্যবস্থাপনার আওতায় কিছু রাস্তা শুধু হাঁটার জন্য ঠিক করা হবে এবং কিছু রাস্তা একমুখী ও দ্বিমুখী করে যানবাহন চলাচলের জন্য এবং যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য আলাদা লেন নির্ধারণ করা হবে।’