নির্বাচন কমিশন ও গণতন্ত্র নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছেন, সেটিকে ‘শালীনতাবহির্ভূত’ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সোমবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্যের জন্য আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সবশেষ গত রোববার ‘দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ শীর্ষক লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন এখন আইসিইউতে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে গণতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে।’
ওই বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘খেলায় যেমন পক্ষ-বিপক্ষের প্রয়োজন হয়, তেমনি একপক্ষীয় কোনো গণতন্ত্র হয় না। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো মূল্যে গণতন্ত্রকে আমরা লাইফ সাপোর্ট থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চাই।’
বিষয়টি নিয়ে সিইসি নূরুল হুদার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনি যে কথাগুলো ব্যবহার করেছেন, সেগুলো শালীনতাবহির্ভূত। আইসিইউ, লাইফ সাপোর্ট - এ কথাগুলো শালীন মনে করি না।’
মাহবুব তালুকদার সবসময় এমন মন্তব্য করেন জানিয়ে নূরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে থেকে নির্বাচন নিয়ে কীভাবে সহায়তা করা যায়, সফল করা যায় – এটা ইসি সদস্যদের দায়িত্ব। উনি সব সময় এ ধরনের কথা বলেন, করার কিছু নেই।’
ব্রিফিংয়ের সময় সেখানে কমিশনার মাহবুব তালুকদারও উপস্থিত ছিলেন। ফলে এ প্রসঙ্গে কথা বাড়াতে চাননি সিইসি। পরে অবশ্য তিনি বলেন, ‘উনি (মাহবুব তালুকদার) সব সময় এরকম করে থাকেন। এ নিয়ে আমরা জিজ্ঞাসাও করি না, জানতেও চাই না।’
কমিশনের সভা থাকলে সবাই চিন্তাভাবনা করে বৈঠকে বসেন জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘মাহবুব সাহেব কোনো চিন্তাভাবনা করেন না। উনি সাত-আটদিন পর্যন্ত একটা শব্দ চয়ন করার জন্য ব্যয় করেন।’
‘এটা পাঁচ বছর ধরে দেখছি’ বলেও মন্তব্য করেন সিইসি। যদিও নিজেদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি করেছেন নূরুল হুদা।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার মাহবুব তালুকদারের বক্তব্য নিয়ে পাল্টাপাল্টি কথা হয়েছে কমিশন সদস্যদের মধ্যে।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সমালোচনা করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। ১১ অক্টোবর এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কমিশনার মাহবুব তালুকদার একটি দলের হয়ে যেভাবে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে মনে হয় ইসি (নির্বাচন কমিশন) নয়, তিনি নিজেই কঠিন ও জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত। মাহবুব তালুকদার নিজেই বর্তমান ইসির মূল সমস্যা।’ইসির উৎকণ্ঠা জানে আওয়ামী লীগ
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হতাহতের ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের উৎকণ্ঠার বিষয়টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অবগত বলে জানিয়েছেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগের) সঙ্গে আলাদা বৈঠক করিনি। কিন্তু আমরা বার্তা দিয়েছি। তারা জানে, আমাদের উৎকণ্ঠা আছে। তাদের বলা হয়েছে, যেন বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখে।’
‘নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মারামারি হচ্ছে, কিন্তু দায় নিতে হয় ইসিকে’ – বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগকে জানানো হয়েছে কিনা প্রশ্ন রাখা হয় সিইসির কাছে।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। মন্তব্য করা যাবে না। সহিংস ঘটনা কিন্তু নির্বাচন ছাড়াও ঘটে। পুলিশ তখন ব্যবস্থা নেয়। নির্বাচনের ঘটনাতেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
সিইসি নূরুল হুদা বলেন, ‘দলীয় লোকজন বঞ্চিত থাকায় এ রকম হতে পারে। এ নিয়ে আমাদের নিজস্ব বিশ্লেষণ নেই। এটা আমরা করতেও পারি না।’একটি মৃত্যুও স্বাভাবিক নয় জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি।’
এর আগে লিখিত বক্তব্যে সিইসি বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৩৩টি ইউপি নির্বাচনে ৮ হাজার ৪৭২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে ১৬টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ প্রিজাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত হওয়ায় বন্ধ করা হয়। তারপরও ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিচ্ছিন্ন হানাহানি ও প্রাণহানি ঘটেছে, যা কাম্য নয়।