নতুন আইনে শুধু মানুষের ভোজ্য লবণে নয়, পশুখাদ্যের লবণেও থাকতে হবে আয়োডিন।
'আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন, ২০২১ অনুযায়ী, প্রাণিখাদ্যে ব্যবহৃত লবণে আয়োডিন না থাকলে দোষী ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল এবং ১৫ লাখ টাকা জরিমানার মুখে পড়তে হবে।
এ ছাড়া কেউ লবণ আমদানি, উৎপাদন, গুদামজাত করা, ভোক্তা পর্যায়ে পাইকারি সরবরাহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ কিংবা পরিশোধন করতে চাইলে এখন থেকে এই আইনের অধীনেই নিবন্ধন নিতে হবে।
কেউ যদি নিবন্ধন না করে তাহলে দুই বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। প্যাকেট বা লেবেলবিহীন ভোজ্য বা অভোজ্য লবণ বিক্রি করলে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানারও বিধান এই আইনে রাখা হয়েছে।
সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন, ২০২১: প্রণয়ন ও অবহিতকরণ’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় এসব তথ্য দেন শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মো. মোশ্তাক হাসান এনডিসি, ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নীতি, আইন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা) শেখ ফয়েজুল আমীন ও উপসচিব (আইন) ড. এ এফ এম আমীর হোসেন। এ সময় ইউনিসেফ বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, লবণ ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং শিল্প মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন আইন অনুযায়ী লবণে পরিমিত মাত্রার আয়োডিন যুক্ত করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘সুস্থ ও মেধাবী প্রজন্ম গঠনে আয়োডিনযুক্ত লবণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য তৈরিতে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু ব্যবসায়িক মুনাফার কথা চিন্তা করলে হবে না, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও কাজ করতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ভোজ্য লবণে আয়োডিন যুক্ত করতে ইতিমধ্যে বিদ্যমান আয়োডিন অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ আইন-১৯৮৯ বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন, ২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যুগোপযোগী আইন।’
তিনি আরও জানান, ‘শিগগিরই এই আইনের আওতায় একটি জাতীয় লবণ কমিটি গঠন করা হবে। এটির আকার হবে ১৪ সদস্যের। জাতীয় এই কমিটি দেশে লবণের চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, আয়োডিনযুক্তকরণ, মজুত ও বিক্রয় ইত্যাদি বিষয়ে এবং লবণ কারখানার জন্য আয়োডিন সরবরাহ এবং ব্যবস্থাপনা নীতির বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করবে। জাতীয় লবণ কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে আয়োডিনযুক্ত লবণ পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়ন সেল কার্যক্রমগুলো নজরদারি করবে।’
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, জাতির সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে, দৈনন্দিন খাবারে আয়োডিন যুক্ত লবণের কোনো বিকল্প নেই। তিনি আয়োডিনযুক্ত লবণের ঘাটতি পূরণে নতুন আইন প্রতিপালনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি লবণ শিল্প মালিকদের সারা দেশে আয়োডিনযুক্ত লবণ সরবরাহের আহ্বান জানান।’
লবণ আমদানির বদলে দেশে কীভাবে আরো বেশি লবণ উৎপাদন করা যায় তার ব্যবস্থা নিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন প্রতিমন্ত্রী।