কার্তিকের মিষ্টি রোদ। ত্রিপল বিছিয়ে সেই রোদে শুকানো হচ্ছে মাছের আঁশ। চারদিকে আশটে গন্ধ।
চার-পাঁচ জন যুবকের কেউ মাছের আঁশ পরিষ্কার করছেন, কেউ সেই আঁশ ধুয়ে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন।
যে মাছের আঁশ উচ্ছিষ্ট হিসেবে ময়লার বাগাড়ে ফেলে দেয়া হতো, সেই উচ্ছিষ্ট আঁশ যুবক মাহবুবের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। বেকারদের জন্য মাহবুব এখন অনুকরণীয়।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার গোমতী নদীর ঝাকুনিপাড়ায় মাছের আঁশ শুকানোর কাজ করেন মাহবুব আলম। তার বাড়ি কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকায়।
মাহবুব জানান, বাজারে মাছ কাটা তার পেশা। বছর দশেক আগে একজন লোক আসেন তার কাছে। তিনি প্রথম মাছের আঁশ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রথম দিন ১০ কেজি মাছের আঁশ বিক্রি করেছিলেন। পান ৪০০ টাকা। সেই থেকে শুরু।
নগরীর রাজগঞ্জে মাছ কাটেন মাহবুব। সেখান থেকে মাছের আঁশ সংগ্রহ শুরু করেন। পাশাপাশি নগরীর বাদশা মিয়া, টমসম ব্রিজ, কোটবাড়ী, পদুয়ার বাজার, চৌয়ারা, মগবাড়ী ও সেনানিবাসসহ বেশ কয়েকটি বাজার থেকে মাছের আঁশ সংগ্রহ করেন।
প্রতিদিন গড়ে ১০০ কেজি আঁশ সংগ্রহ করেন মাহবুব। মাসে প্রায় ৩ টন। রোদে শুকানোর পর প্রতি কেজি আঁশ ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেন।
মাহবুব জানান, ছয়জন কর্মচারী রয়েছে। প্রতিজনকে থাকা খাওয়াসহ মাস শেষে ১০ হাজার টাকা করে বেতন দেন। সব খরচ বাদে প্রতিমাসে এখন তার ১৫ হাজার টাকা আয় হয়।
কোন দেশে যায় মাছের আঁশ?
এসব মাছের আঁশের শেষ গন্তব্য কোথায়, এমন প্রশ্নে মাহবুব নিউজবাংলাকে জানান, তার কাজ মাছের আঁশ সংগ্রহ করে দেয়া। তবে ঢাকা থেকে যারা আসেন তাদের মাধ্যমে জেনেছেন শুকনো আঁশগুলো তারা প্যাকেটজাত করে চীন, জাপানে, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়াতে রপ্তানি করেন।
কী কাজে ব্যবহার হয় মাছের আঁশ?
ঘরের শোপিস, ঔষধ, ক্যাপসুলের বাহ্যিক অংশ, গহনা, খাদ্য সাপ্লিমেন্টারি তৈরির কাজে মাছের আঁশ ব্যবহৃত হয়।
মাছের আঁশ নিয়ে তার স্বপ্ন জানতে চাইলে মাহবুব বলেন, ‘আরও বড় পরিসরে ব্যবসা বৃদ্ধি করতে চাই। যেখানে অনেক বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’