চাষের মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন প্রচুর খাবার, তবে পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় সাধারণ মাছ চাষিদের পক্ষে অনেক সময়ই প্রয়োজন অনুযায়ী তা সরবরাহ সম্ভব হয় না।
এতে চাষিরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, মাছ উৎপাদনে সময়ও বেশি লাগছে। সেই সংকট এবার কেটে যেতে পারে।
ব্ল্যাক সোলজারস ফ্লাই নামে এক ধরনের পতঙ্গের লার্ভাকে মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহারে সাফল্য মিলেছে। জৈবিক বর্জ্য খেয়ে বড় হওয়া এই লার্ভা উৎপাদনে খরচ যেমন কম হবে, একই সঙ্গে মিলবে মাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম বর্জ্য, পোকা ও মাছ এই তিনটির সমন্বয় করে গবেষণাটি করেছেন। ১০ বছর গবেষণার পর সাফল্য পেয়েছেন তিনি।
বাকৃবির অ্যাকোয়াকালচার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আবর্জনা, পচনশীল ফলমূল, শাকসবজি, হাঁস-মুরগির ও গৃহপালিত প্রাণির বিষ্ঠা খেয়ে বড় হয় ব্ল্যাক সোলজারস ফ্লাইয়ের লার্ভা। জৈব আবর্জনার ৭১.৫ শতাংশ পর্যন্ত হজম করতে সক্ষম এই লার্ভা। বাকি অংশ বায়োডিজেল, প্রোটিন ও কম্পোস্ট সারে রূপান্তরিত হয়।
এ লার্ভাতে ৪০- ৫০ শতাংশ আমিষ, ৩০-৩৬ শতাংশ স্নেহ এবং ২০- ২২ শতাংশ শর্করা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম রয়েছে এতে।
গবেষক আব্দুস সালাম নিউজবাংলাকে জানান, পোকামাকড় মানেই ক্ষতিকর, সমাজে এমন একটি ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। তবে অনেক প্রজাতির পোকামাকড় আছে যারা পরাগায়ন ও ফসলের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড় ধ্বংসের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে।
তিনি আরও জানান, বর্তমান বিশ্বে ও দেশে উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়। এ খাদ্য বর্জ্য পচে পরিবেশ দূষণ করছে। এ বর্জ্য কাজে লাগিয়ে কীভাবে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করে এ সাফল্য পান তিনি।
আব্দুস সালাম বলেন, গবেষণার অংশ হিসেবে লার্ভা থেকে খাদ্য তৈরি করে তা তেলাপিয়া মাছকে খাওয়ানো হয়। এতে বাজারে পাওয়া বাণিজ্যিক খাদ্যের চেয়ে অনেক ভালো ফল পাওয়া গেছে।
লার্ভা বাজারজাতের বিষয়ে জানান, এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ে মাছচাষিদের মধ্যে এ লার্ভা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পোকাটির লার্ভা কেজিপ্রতি তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রয়োজন অনুযায়ী উৎপাদন ও বাজারজাত এখনও শুরু হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান জানান, মহানগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এই লার্ভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মাছের পাশাপাশি মুরগি, হাঁস ও অন্যান্য গৃহপালিত পশু-পাখির বিকল্প খাদ্য হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।