বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাসে বাড়তি ভাড়া এক-দুই টাকার অভাবেও

  •    
  • ১৫ নভেম্বর, ২০২১ ০৮:১৭

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা হঠাৎ করে ছাপানো হয় না। কারণ টাকা ছাপানোর একটি প্রক্রিয়া আছে। কী পরিমাণ টাকার দরকার হবে সেটা আগে পর্যালোচনা করা হয়। সেভাবেই ছাপানো হয়। পরে বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে তা বাজারে ছাড়া হয়।’

ফার্মগেট থেকে ইন্দিরা পরিবহনের টেম্পুতে করে ৬০ ফুট সড়কের পাকা মসজিদ স্টপেজে নামেন আরিফুল হাসান। বর্ধিত ভাড়া ২২ টাকা। ২৫ টাকা দিতেই ভাংতি নেই বলে জানান হেলপার। দাবি করেও লাভ হয়নি। টেম্পু ছেড়ে চলে যায়।

শুধু আরিফুলই নয়, ফার্মগেট থেকে রেডিও স্টপজের বর্ধিত ভাড়া ১৫ টাকা। এই ভাড়া দেয়া নিয়েও তৈরি হয় বাকবিতণ্ডা। পাঁচ টাকার নোট এবং কয়েন সংকটে টেম্পু যাত্রী এবং হেলপারের মধ্যে কথা কাটাকাটি।

গুলশান-১ থেকে বাড্ডা লিংক রোডে বর্ধিত ভাড়া ১২ টাকা। আগে যেটা ছিল ১০ টাকা। বাড়তি ২ টাকা দেয়া-নেয়ায় কথাকাটাকাটি হচ্ছে।

১ টাকা ২ টাকার নোট কারো পকেটে নেই। এমনকি নেই ৫ টাকার নোটও। ফলে দৈনন্দিন লেনদেনে ফাঁপড়ে পড়ছেন সবাই।

ব্যাংকগুলো থেকে পর্যাপ্ত নোট সরবরাহ করা হচ্ছে না। অনেক ব্যাংকও ছোট নোটের চাহিদা না দেয়ায় সংকট বাড়ছে। বিশেষ করে বাস ভাড়া দেবার ক্ষেত্রে বাড়ছে অসন্তোষ।

নোট নেই, বিতণ্ডা আছে

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ নতুন যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে, তাতে ভাংতি টাকার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। বিশেষ করে ১, ২ ও ৫ টাকার প্রয়োজন বেশি।

উত্তরা থেকে কারওয়ার বাজার ভাড়া ৩৮ টাকা। এখানে ভাংতি সমস্যার কারণে যাত্রীকে ৪০ টাকাই গুণতে হচ্ছে। মতিঝিল থেকে উত্তরা ৪৬ টাকা ভাড়ার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ টাকার নোট দিলে ভাংতি অংশটি ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না।

মিরপুর-১ থেকে প্রেসক্লাব ভাড়া ২৩ টাকা। এখানে ২৫ টাকা গুণতে হচ্ছে। সদরঘাট থেকে উত্তরায় ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৮ টাকা। তবে অনেক ক্ষেত্রে ৫০ টাকা দিচ্ছেন যাত্রী। শাহবাগ থেকে গাবতলী ভাড়া ১৭ টাকা। ২০ টাকার নোট দিলে কন্ডাক্টর পুরোটাই রেখে দিচ্ছেন ভাংতির অভাবে।

মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় শিকড় বাসের যাত্রী শিপন আলি বলেন, ‘প্রতিদিনই দুই-এক টাকা করে বাড়তি দিতে হচ্ছে। ভাংতি না থাকার অজুহাতে বেশি টাকা নিয়ে নিচ্ছে বাসওয়ালা।’

সুমি আক্তার নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘ভাড়া যেভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, তাতে ১ ও ২ টাকার নোট দরকার। কিন্তু এই নোটগুলো পাওয়া যায় না। যাত্রীরাও দিতে পারে না। সেই সুযোগ নেয় বাসের কন্ডাক্টর।’

আলিফ বাসের যাত্রী রোকেয়া বলেন, ‘এক টাকার কয়েন ছিল এতদিন, কিন্তু এখন তাও পাওয়া যায় না। দুই টাকার নোট খুবই নোংরা।’

যাত্রীদের অভিযোগ, ৫ টাকার নোটও এখন বিরল হয়ে গেছে। যাও পাওয়া যায়, তাও জরাজীর্ণ। কয়েন পাওয়া যায়, কিন্তু তা পকেটে রাখা কঠিন।

যাত্রীরা বলছেন, যেহেতু মানুষের মধ্যে কয়েন সঞ্চয়ের প্রবণতা বেশি, সেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত বাজারে ১ টাকার কাগুজে নোটের সরবরাহ বাড়ানো। এতে বিক্রেতারাও অজুহাত দিতে পারবে না, আবার ক্রেতারাও ঠকবে না।

বাসের কন্ডাক্টররাও একই অভিযোগ করে বলেন, খুচরা নোট কোথাও পাওয়া যায় না। ভাড়া দিতে ১ টাকা এবং ২ টাকার নোট বেশি দামে কিনে আনতে হয়। তাও পাওয়া যায় না। সরকারের তরফ থেকে নোট ছাড়া হয় না।

নোট নেই কেন

কয়েন সংকটের পেছনে ব্যাংকের গাফিলতিকেই দায়ী করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বারবার বলেও ব্যাংকগুলোকে এ কাজে উৎসাহিত করতে পারছে না নিয়ন্ত্রক এই সংস্থা।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম ১ টাকার কাগুজে মুদ্রার প্রচলন হয়। আর ১৯৭৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সবশেষ ১ টাকার নতুন নোট ছাড়া হয়েছিল। বর্তমানে ১ টাকার যে নোটটি বাজারে পাওয়া যায়, সেটি হলো ১৯৭৯ সালের ছাড়া নোট। এর পাশাপাশি রয়েছে ১ টাকার ধাতব মুদ্রা।

১৯৮৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাজারে আসে ২ টাকার নোট। এরপর আরও কয়েক দফা বিভিন্ন ডিজাইনের ২ টাকার নোট বাজারে আনা হয়। সবশেষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ১২ তারিখ নতুন ডিজাইনের ২ টাকার নোট বাজার আসে, যেটি এখনও বিদ্যমান। এর পাশাপাশি রয়েছে ২ টাকার ধাতব মুদ্রা।

১৯৭২ সালের ২ জুন বাজারে প্রথম ৫ টাকার কাগুজে মুদ্রা ছাড়া হয়। এরপর বেশ কয়েকবার এ নোটের ডিজাইন পরিবর্তন হয়। ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর সবশেষ নতুন ডিজাইনের ৫ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়। এখন সেই নোট বাজারে চলমান।

১৯৯৫ সালের ১০ অক্টোবর বাজারে আসে ৫ টাকার ধাতব মুদ্রা। ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর বাজারে আসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত ৫ টাকার মুদ্রা। বর্তমানে ১ টাকা, ২ টাকা ও ৫ টাকা সরকারি মুদ্রা। বাকিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট বা মুদ্রা।

চাহিদা দেয়া হয় না

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা হঠাৎ করে ছাপানো হয় না। কারণ টাকা ছাপানোর একটি প্রক্রিয়া আছে। কী পরিমাণ টাকার দরকার হবে সেটা আগে পর্যালোচনা করা হয়। সেভাবেই ছাপানো হয়। পরে বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে তা বাজারে ছাড়া হয়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, নোট বা কয়েনের সংকট নেই। চাহিদার ভিত্তিতে নোট সরবরাহ করা হয়। তবে, ব্যাংকগুলো থেকে চাহিদা পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাগত জটিলতার কারণে এই নোটগুলো নেবার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখানো হয় না।

ব্যাংকগুলোতে বারবার তাগাদা দেয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, নোট সংকট হলে মানুষের সমস্যা তৈরি হয়।

এ বিভাগের আরো খবর