রাজধানী ঢাকায় বহুতল ভবন আরও বেশি তৈরি করলে রাস্তায় মানুষ ও যানবাহনের চাপ ও জট বাড়বে। এতে দীর্ঘ সময় গাড়িতে অলসভাবে বসে থেকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
রোববার রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি আয়োজিত বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের আলোচনা সভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।
রাজধানীর নতুন ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) বহুতল ভবন নির্মাণের দাবি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘ড্যাপে উঁচু ভবন অন্তর্ভুক্ত করতে অনেকেই দাবি তুলছেন। উঁচু ভবন নির্মাণ করতে হলে সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলার মাঠ এবং বিনোদন কেন্দ্রসহ অন্যান্য নাগরিক সেবাও নিশ্চিত করতে হবে।’
‘আমি কেবল ভবন উঁচু করলাম আর রাস্তায় মানুষ ও যানবাহনের চাপ আরও বেড়ে গেল। এমন উঁচু ভবন করে যানজট বাড়িয়ে রাস্তায় বসে থেকে আমাদের ডায়াবেটিস আরও বাড়বে। এতে সবার স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে জনসংখ্যার তুলনায় মাঠ ও পার্কের সংকট রয়েছে। তবে নতুন ড্যাপে পর্যাপ্ত পার্ক ও মাঠের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করা আছে।’
রোববার রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি আয়োজিত বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ছবি: নিউজবাংলা
এ সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা শহরে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা বিশ্বের যেকোনো শহরের তুলনায় বেশি। যে কারণে রাজধানীবাসীর প্রাপ্য নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করা প্রয়োজন, কিন্তু এর জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, পার্ক আমাদের নেই।
‘ক্লিনিক-হাসপাতাল, শিক্ষা, বিনোদনকেন্দ্র, খেলার মাঠ সবকিছু আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে’, যোগ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘ড্যাপে বহুতল ভবন অন্তর্ভুক্ত করতে অনেকেই দাবি তুলছেন। কিন্তু উঁচু ভবন করে শুধু মানুষ থাকলে হবে না, মানুষকে তো নিচে নামতে হবে। তাদের জন্য রাস্তাঘাট, পার্ক-মাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা দরকার।
‘ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে এই সংকট কাটবে। এ ছাড়া ঢাকাকে আধুনিক-দৃষ্টিনন্দন ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সবকিছু পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের মাথাপিছু আয় বা সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মোকাবিলা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারলে পরিবেশের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিবে। তাই সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
দেশে চারটি অসংক্রামক রোগের মধ্যে অন্যতম একটি ডায়াবেটিস। বর্তমানে ৮৪ লাখ মানুষ এই রোগে ভুগছেন। আগামী চার বছরে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এই হিসাবে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দেড় কোটি ছাড়াতে পারে।
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ডায়াবেটিসের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা শীর্ষক এক সেমিনারে রোববার সন্ধ্যায় এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।