করোনার বিধিনিষেধ শেষে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নামিদামি কোম্পানিগুলো দারুণ আয় করে শেয়ারধারীদেরকে আশাবাদী করে তুলতে পারলেও এক গাদা কোম্পানি আবার তাদের বিনিয়োগকারীদের হতাশার কারণ হয়েছে।
এসব কোম্পানির বেশিরভাগ গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছিল। কোনো কোনো কোম্পানি মুনাফা করে এবার লোকসান দিয়েছে।
রোববার যেসব কোম্পানি আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে অনেকগুলোই মুনাফা করতে পারেনি। এর আগেও বেশ কিছু কোম্পানি লোকসান দেয়ার তথ্য জানিয়েছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছু কোম্পানির গত এক বছর লোকসান দেয়ার পেছনে করোনা মহামারির প্রভাব ছিল। সরকারের পক্ষ থেকেই কোম্পানি বন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্তও এসেছিল। ফলে চলমান একটি কোম্পানি যখন হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই ধাক্কা লাগে।’
তিনি বলেন, ‘কোম্পানি আবার চালু করতে গেলে অনেক কিছু গুছিয়ে নিতে হয়। রপ্তানিমুখি কোম্পানি হলে আন্তর্জাতিক বাজারে আবার নতুন করে যোগাযোগ করতে হয়। ফলে সেই সময়ের উৎপাদন ও মার্কেটিংয়ের যে গ্যাপ তৈরি হয়েছিল সেটি অনেক কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনেকটাই দৃশমান।’
এই বিশ্লেষক বলেন, ‘বেশ কিছু দুর্বল ও বন্ধ কোম্পানির ক্ষেত্রে এই হিসাব খাটে না। বছরের পর বছর এসব লোকসান দিয়ে আসছে। আবার সেগুলোর শেয়ার লেনদেন নিয়ে প্রায় সময়ই কারসাজি হয়। এগুলোর বিষয়ে এখন নজর দেয়া উচিত।’
তবে এখন পর্যন্ত যেসব কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, তাতে আশাবাদী হয়ে উঠার কারণ দেখেছেন দেবব্রত। বলেন, ‘গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের লোকসানের তুলনায় অনেক কোম্পানির লোকসান কমেও এসেছে। কিছু কোম্পানি লোকসান থেকে মুনাফায় ফিরেছে। অনেক কোম্পানির আয় বেড়েছে।’
লোকসানে বছর শুরু যাদের
স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক
কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৩৩ পয়সা লোকসান দিয়েছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৯৭ পয়সা আয় হয়েছিল।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ৭ টাকা ৩৯ পয়সা।
সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল
কোম্পানির প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৫৭ পয়সা লোকসান হয়েছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৬৮ পয়সা লোকসান হয়েছিল।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার নিট সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৯১ পয়সা।
ওয়াইমেক্স ইলেকট্রোড
প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৩৫ পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ২ পয়সা।
প্রথম প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ২ পয়সা।
জাহিন স্পিনিং মিলস
এই কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান দিয়েছে ২৪ পয়সা। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে লোকসান ছিল শেয়ার প্রতি ২ পয়সা।
জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারে সম্পদ ছিল ৮ টাকা ৭৮ পয়সা। সেটি কমে হয়েছে ৬ টাকা ২ পয়সা।
আফতাব অটো
প্রকৌশল খাতের এই কোম্পানিটি জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৯ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে এই লোকসান ছিল ২০ পয়সা।
সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ ছিল ৫৭ টাকা ৫৪ পয়সা। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে শেয়ারের বিপরীতে সম্পদ ছিল ৬০ টাকা।
ইয়াসিন পলিমার
প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৪ পয়সা। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৪৩ পয়সা লোকসান হয়েছিল।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৯৮ পয়সা।
কেপিসিএল
কোম্পানিটি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ১০ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৯১ পয়সা।
সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ৯৭ পয়সা। গত ৩০ জুন শেয়ার প্রতি সম্পদ ছিল ২২ টাকা ৭ পয়সা।
সোনারগাঁও টেক্সটাইল
এই কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৮ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ৪১ পয়সা।
কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা।
অলিম্পিক একসেসোরিজ
এই কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৭ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৮ পয়সা।
সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৫৭ পয়সা।
ফাইন ফুডস
প্রথম প্রান্তিক কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি ৬ পয়সা লোকসান দিয়েছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে এই লোকসান ছিল ১২ পয়সা।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৫৪ পয়সা।
জেনারেশন নেক্সট
কোম্পানি চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৫ পয়সা লোকসান দিয়েছে। গত অর্থবছরের এই সময়ে শেয়ারে লোকসান ছিল ৮ পয়সা।
লোকসানের কারণে এই কোম্পানিটির সম্পদ কিছুটা কমে গেছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৮৫ পয়সা।
ফার কেমিক্যালের
কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৩ পয়সা লোকসান দিয়েছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১ পয়সা।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ১৩ টাকা ৬৮ পয়সা।
রোববারের আগেও বেশ কিছু কোম্পানির লোকসান দেয়ার প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে আছে:
শ্যামপুর সুগার
রাষ্ট্রায়ত্ত এই চিনিকলটি চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ২১ টাকা ৬২ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে এই লোকসান ছিল শেয়ার প্রতি ২৫ টাকা ১৫ পয়সা।
ক্রমাগত লোকসান দিয়ে আসা কোম্পানিটির শেয়ারের বিপরীতে কোনো সম্পদ নেই। সেপ্টেম্বর শেষে শেয়ার প্রতি দায় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১১৪ টাকা ৫২ পয়সা।
জিলবাংলা সুগার
এটিও রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল এবং লোকসানি। সেপ্টেম্বরে প্রথম প্রান্তিক শেষে এই কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৯ টাকা ৯৬ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে এই লোকসান ছিল ১৯ টাকা ৩৬ পয়সা।
ক্রমাগত লোকসানের কারণে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দায় দাঁড়িয়েছে ৮১৭ টাকা ৪৩ পয়সা।
জুট স্পিনার্স
কোম্পানির প্রথম প্রান্তিকে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ১০ টাকা ৮৩ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১১ টাকা ১৬ পয়সা।
কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি কোনো সম্পদ নেই। উল্টো বছরের পর বছর লোকসানের কারণে শেয়ারের বিপরীতে দায় দাঁড়িয়েছে ৪০৪ টাকা ৪১ পয়সা।
রেনউইক যগেশ্বর
এই কোম্পানিটি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৫ টাকা ৯২ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে এই লোকসান ছিল ৪০ পয়সা।
টানা লোকসানের কারণে এই কোম্পানিটিরও শেয়ার প্রতি কোনো সম্পদ নেই। উল্টো একেকটি মেয়ারের বিপরীত দায় দাঁড়িয়েছে ২৯ টাকা ১৭ পয়সা।
অলটেক্স
প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ২৪ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১ টাকা ১৫ পয়সা।
কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ৬২ পয়সা।
খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়
প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ৩ পয়সা, গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৮ পয়সা।
সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২০ পয়সা।
ইস্টার্ন ক্যাবলস
সরকারি মালিকানাধীন এই কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ১ টাকা ১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১ টাকা ২৩ পয়সা।
সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ৪১ পয়সা।
ওসমানিয়া গ্লাস
এই কোম্পানিটি গত সেপ্টেম্বরে প্রথম প্রান্তিক শেষে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৯৬ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১ টাকা ৯৩ পয়সা।
সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের বিপরীতে সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৪ টাকা ৮৮ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে সম্পদ ছিল ৯০ টাকা ৫১ পয়সার।
এটলাস বাংলাদেশ
রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৩৪ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৫২ পয়সা।
আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১২৭ টাকা।
ইভিন্স টেক্সটাইলের
প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ২৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি সমন্বিত লোকসান ছিল ৩০ পয়সা।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ১২ টাকা ৮৪ পয়সা।
গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল
প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ২১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ১৭ পয়সা।
সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৫৪ টাকা ৪৪ পয়সা।
আনলিমা ইয়ার্ন
প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৫ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ১১ পয়সা।
সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৪৮ পয়সা।
খান ব্রাদার্স
প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ৭ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৬ পয়সা।
এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ২৯ পয়সা।