দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রভাব খুলনা পাওয়ার কোম্পানি বা কেপিসিএল লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।
রোববার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে এই বিষয়টি দেখা যায়।
এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১০ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৯১ পয়সা।
২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ারধারীরা এখন ভীষণ উদ্বেগের মধ্যে আছেন। গত মে মাসের শেষে খুলনা ও যশোরে কোম্পানিটির দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়।
এখন কেবল সহযোগী কোম্পানি ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ার কোম্পানির ৩৫ শতাংশের মালিকানার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে কোম্পানিটিকে।
যে আইনের অধীনে এই কোম্পানিটি চলত, সেই আইনের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানোর পর কেপিসিএলের বিনিয়োগকারীরা উৎসাহী হয়ে উঠেন। তবে এই আইন পাসই যথেষ্ট নয়। কোম্পানির সঙ্গে আলাদা চুক্তি হতে হবে আর সেই চুক্তি আটকে আছে প্রায় দুই মাস ধরে।
সরকার ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা কুইক রেন্টালের মেয়াদ আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে কেপিসিএলের বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে মেয়াদ বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুরোধের পর সে অবস্থান থেকে সরে আসে।
তবে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন, ২০১০’ এর মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়ানো হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর। জাতীয় সংসদ মেয়াদ বৃদ্ধির বিলে সায় দেয়ার পাঁচ দিন পর গত ২১ সেপ্টেম্বর কেপিসিএলসহ চারটি কোম্পানির সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের বৈঠক হয়।
সরকার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিকে কোম্পানিগুলোকে নতুন করে কেন্দ্র চালানোর অনুমতি দেবে। অর্থাৎ তাদের কাছ থেকে যতটুকু বিদ্যুৎ কেনা হবে, ততটুকুর জন্য টাকা দেবে সরকার।
বৈঠকে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে এ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনার জন্য গ্যারান্টি চাওয়া হয়। তারা বলেছে, ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলে এই বিষয়ে আগে থেকে সিদ্ধান্ত না হলে তাদের পক্ষে কোম্পানি চালানো কঠিন।
আবার বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি মূল্য বা ট্যারিফ হার নিয়েও আলোচনা চূড়ান্ত হয়নি। ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকায় ট্যারিফ বেশি চেয়েছে কোম্পানিগুলো। অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ তা বর্তমান হারের চেয়ে কমাতে চেয়েছে। তাদের যুক্তি, আগের যে ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাতে কেন্দ্র স্থাপনসহ নানা ব্যয় হিসাব করা হয়েছিল। এখন নতুন করে কেন্দ্র স্থাপনের খরচ থাকবে না। ফলে কোম্পানির উৎপাদন খরচ কম থাকবে।
সেদিনের বৈঠকের পর আবার বসার কথা থাকলেও আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠকের তারিখ এখনও হয়নি। কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ সচিবের সঙ্গে আলাদাভাবে বসলেও কোনো সমঝোতা হয়নি। আর কেপিসিএলের পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদেরকে কোনো বার্তাও দেয়া হয়নি।
এর মধ্যে গত ২৮ অক্টোবর কেপিসিএল যে লভ্যাংশ ঘোষণা করে, তাতে আর্থিক হিসাব বিবরণী নিয়ে যে প্রশ্ন উঠে, তারও কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি কোম্পানিটির পক্ষ থেকে।
গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ার প্রতি ৮৭ পয়সা আয় করে ১ টাকা ২৫ পয়সা লভ্যাংশ দেয়ার কথা জানিয়েছে কোম্পানি।
তবে মার্চে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির আয় ছিল শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৬৫ পয়সা। আবার সহযোগী কোম্পানি ইউনাইটেড পায়রার ৩৫ শতাংশ মালিকানা থেকে আয় হয় ১৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫০ টাকা। তার পরেও চতুর্থ প্রান্তিকে কোম্পানিটি কীভাবে ১ টাকা ৭৮ পয়সা লোকসান দিল, তার কোনো ব্যাখ্যাও পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদেরকে দেয়া হয়নি।
লোকসানে পড়া কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদের পরিমাণও কমেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে সম্পদ দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ৯৭ পয়সা। গত ৩০ জুন শেয়ার প্রতি সম্পদ ছিল ২২ টাকা ৭ পয়সার।
বিদ্যুৎকেন্দ্র নবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তায় প্রতিনিয়ত দর হারাচ্ছে কেপিসিএল। গত ২১ সেপ্টেম্বর শেয়ারদর ৫২ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন তা ২৬ টাকা ১০ পয়সা।