বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভোটের সহিংসতায় থমথমে শরীয়তপুর

  •    
  • ১৪ নভেম্বর, ২০২১ ২২:১৫

সহিংস ভোটের পর শুক্র, শনি ও রোববার হামলা-ভাঙচুরে ঘটনা ঘটে সদর উপজেলার দুইটি ইউনিয়নে। দুটিতেই জয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে।

ভোটের পরেও সহিংসতা থামছে না শরীয়তপুর সদর উপজেলায়। ভোট বৃহস্পতিবার শেষ হলেও এর জেরে রোববার পর্যন্ত দুই ইউনিয়নে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্কিত গ্রামবাসী, অনেকে গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৫টি ইউপির সঙ্গে তুলাসা ও ডোমসারে ভোট হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এর মধ্যে তুলাসায় চেয়ারম্যান হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জামাল হোসাইন। মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র হয়ে লড়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম।

স্থানীয় সুত্র জানিয়েছেন, নির্বাচনে জামালকে সমর্থন দিয়েছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব মোর্শেদ টিপু। তিনিও জানিয়েছেন, তার কর্মী-সমর্থকরা জামালের পক্ষে কাজ করেছেন।

জামাল বিজয়ী হওয়ার পর তুলাসায় জাহিদুলের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, তাদের ওপর হামলাও হয়েছে কয়েক দফায়। জাহিদুলের অভিযোগ, জয়ের পর জামালের অনুসারীরাই এই হামলা চালিয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় সবশেষ হামলার ঘটনাটি ঘটে। ইউনিয়নের লতাবাগ ও উপরগাঁও গ্রামে ১১টি বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। জাহিদুল জানান, সেই বাড়িগুলো তার সমর্থকদের।

এর আগে ভোটের দিন ও পরদিন গুড়িপাড়া, বাইশরশি ও দক্ষিণ গোয়ালদি গ্রামে হামলা চালানো হয় অন্তত ৫০টি বাড়িঘরে। এসব ঘরের লোকজন বলছেন, জাহিদুলকে সমর্থন দেয়ায় এই হামলা হয়েছে।

এসব গ্রামের লোকজন আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে যাচ্ছেন।

লতাবাগ গ্রামের অঞ্জনা বেগম বলেন, ‘টিপু মাদবর লোকজন সব পাঠাইছে। আমরা আনারস করছি (জাহিদুলের নির্বাচনি প্রতীক)। এইডা আমাকে দোষ। আমরা কেন্দ্রেও যাইতে পারি নাই। হুমকির ভয়। হেয়ার পরেও আমাগো নির্যাতন করতাছে, অত্যাচার করতাছে। ঘর বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট করতাছে। সোনা-গয়না যা ছিল সব লইয়া গেছে। ইজ্জতের ভয়ে আমরা পলাইয়া আছিলাম।’

একই গ্রামের তাসলিমা বেগম বলেন, ‘৫০-৬০ জন আইছিল। সবার হাতেই ডাল, সরকি ও স্যান ছিল। ভয়ে মাইয়া লইয়া বাইরে পলাইছি। ইচ্ছামত ঘর কোপাইয়া গেছে। কইছে অর বাহেরে পাইলে মাইরা হালাইবো। অহন আমরা ভয়ে আছি। পুলিশ তো কিছু করতাছে না।’

পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদুল বলেন, ‘প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছিল। নির্বাচনের দিন থেকে এর পরেও বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি মিলে হামলা করে এখন আমার সমর্থকদের গ্রামছাড়া করা হচ্ছে। কেউ মামলা করারও সাহস পাচ্ছে না।’

জেলা বিএনপি নেতা মাহাবুব মোর্শেদ টিপু তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘এসব হামলা-ভাঙচুর পূর্ববর্তী হামলা-ভাঙচুরের ধারাবাহিকতা মাত্র। আমি আমার সমর্থকদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেছি। এই মুহূর্তে আমার কর্মী-সমর্থকরা কোনো ধরনের হামলা-ভাঙচুরে যাচ্ছে না। আমি যেহেতু নির্বাচন করিনি, আমার সর্মথকরা আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছে। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।’

তুলাসা ইউপির বিজয়ী চেয়ারম্যান জামাল বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমার জয়কে অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। এজন্যই এ ধরনের কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তবে আমার কর্মী, সমর্থক ও আমি এ ধরনের ঘটনায় জড়িত নই।’

নির্বাচনের জেরেই এসব সহিংসতা জানিয়ে শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিনই পুলিশ টহলে আছে। বিজয়ী এবং পরাজিত উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যাদের যাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে, তারা অভিযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে, রোববার দুপুরে সংহিসতার ঘটনা ঘটেছে ডোমসার ইউনিয়নে। সেখানে নির্বাচনে বিজয়ী ও পরাজিত সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন।

ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তেঁতুলিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ওসি আক্তার হোসেন।

তিনি জানান, বিজয়ী ও পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা জড়ো হয়েছে জেনে পুলিশ দুই পক্ষকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তারপরও তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ককটেল বিস্ফোরণ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত মেম্বার আজগর আলী খান বলেন, ‘নির্বাচন চলাকালে তারা (পরাজিত সদস্য প্রার্থী মতিউর রহমান ছৈয়ালের সমর্থকরা) আমার সমর্থকদের মারধর করেছেন। নির্বাচনের পর তারা আমাদের এলাকায় যেতে দিচ্ছিলেন না। প্রতিবাদে জনসাধারণ ক্ষুব্ধ হয়ে জড়ো হয়েছিল। তখন তারা অতর্কিত হামলা করেছেন।’

জবাবে মতিউর রহমান ছৈয়াল বলেন, ‘আজগর খান বিজয়ী হয়েই আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করেছেন।’

এসব ঘটনা অপ্রত্যাশিত জানিয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কোনো সংঘাতই সুখকর নয়। কোনো সংঘর্ষ-হামলা আওয়ামী লীগ সমর্থন করে না।

‘গত কয়েক দিনের তুলাসারে সব ঘটনা দল পর্যবেক্ষণ করেছে। একই সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এ সব ঘটনা থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়েছে। ওই এলাকার আওয়ামী লীগের নেতারা এ সব ঘটনা বন্ধে অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপাশি হামলা সংঘর্ষ ভাঙচুর বন্ধে প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আর যাতে কোনো ধরনের সংঘর্ষ-সংঘাত না ঘটে সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সজাগ রয়েছে।’

তৃণমূলে দ্বিতীয় ধাপের এই নির্বাচনে প্রচারকালেই বিভিন্ন জেলায় সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন বৃহস্পতিবারও ঝড়েছে ছয় প্রাণ। আহত হয়েছে শতাধিক। বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনকেন্দ্রীক সহিংসতা চলে শুক্র ও শনিবারও।

এ বিভাগের আরো খবর