বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত প্র্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য তার ফিঙ্গার প্রিন্ট ইন্টারপোলকে দেয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মু. আনোয়ার হোসেন রোববার এই তথ্য জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ৩২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাতটি মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক। এর আগে একটি মামলায় চার্জশিট দেয় দুদক।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুলসহ ২৯ জনকে মামলাগুলোতে আসামি করা হয়েছে।
৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ১০ নভেম্বর পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয় দুদক। অনুমোদিত চার্জশিটে আসামির তালিকায় আরও রয়েছেন-পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল, শঙ্খ বেপারী, সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। পরবর্তীতে চার্জশিটে আসামি হিসাবে আরও নাম যুক্ত হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, পি কে হালদার বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার সম্পদ নিজ দখলে রেখেছেন। এটা দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি ওই অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস, প্রকৃতি, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ, উৎস গোপন বা আড়াল করতে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ করেছেন।
মামলার প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বোর্ডের সদস্যরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে জাল রেকর্ডপত্র তৈরি করেন। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ঋণ পেতে তারা প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৩১৮ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে, বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে সেই টাকা বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর এবং রূপান্তরের মাধ্যমে পাচার করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ কারণে তাদের নামে পৃথক সাতটি মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক।
মামলার আসামি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক এমডি মো. রাশেদুল হক, নয় বোর্ড সদস্য, পি কে হালদারের আত্মীয়-সহযোগীসহ মোট ২৯ জন।
এ ছাড়া জি অ্যান্ড জি এন্টারপ্রাইজের নামে ৩০ কোটি টাকা, তামিম অ্যান্ড তালহা ব্রার্দাস লিমিটেডের নামে ৩০ কোটি টাকা, গ্রীনলাইন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি টাকা, এমটিবি মেরিন লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি টাকা এবং পি অ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ৫০ কোটি টাকার মামলা দায়ের হয়েছে।
অপরদিকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের নামে এ পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১৫টি। মোট এক হাজার ২০০ কোটি টাকার তছরুপের এসব মামলায় মোট আসামি ৩৭ জন। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১ জন। আর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ৬৯ জনের বিরুদ্ধে।