বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মন্ত্রীর চিঠিতে নয়, কামরুন্নাহার প্রত্যাহার সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে

  •    
  • ১৪ নভেম্বর, ২০২১ ১৮:১৪

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবস্থা নেয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তার (কামরুন্নাহার) বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেটিও আইনানুগভাবে এগিয়ে যাবে। তাকে শো-কজ করা হবে। তিনি কেন এটা বলেছেন তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। সেটা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হবে।’

ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নিতে বলা বিচারক বেগম কামরুন্নাহারের বিরুদ্ধে স্ব-উদ্যোগেই ব্যবস্থা নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে চিঠি পাঠানোর আগেই রোববার সকালে কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা প্রত্যাহার করা হয়।

তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিষয়টি এখানেই শেষ হয়নি। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিচারক কামরুন্নাহারকে কারণ দর্শাতে বলা হবে।

রাজধানীর বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে দুই নারীকে ধর্ষণের মামলায় গত বৃহস্পতিবার পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেন ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম কামরুন্নাহার।

রায়ের পর্যবেক্ষণে ঘটনার ৩৮ দিন পর ধর্ষণের মামলা করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কামরুন্নাহার। তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টা পর মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। ফলে এই সময়ের পর পুলিশকে কোনো ধর্ষণ মামলা না নিতেও পরামর্শ দেন তিনি।

বিচারক কামরুন্নাহারের এমন মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছে চিঠি পাঠানো হবে।’

তবে এর আগেই রোববার সকালে বিচারক বেগম কামরুন্নাহারের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িক প্রত্যাহার করেন প্রধান বিচারপতি। একইসঙ্গে তাকে আদালতে না বসার নির্দেশনাও দেয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে এ নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন আদালতের বিশেষ কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মহোদয়গণের আলোচনাক্রমে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারকে ১৪/১১/২০২১ তারিখ সকাল সাড়ে ৯টা হতে আদালতে না বসার নির্দেশ প্রদান করেছেন।’

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘কামরুন্নাহারের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে তাকে বর্তমান কর্মস্থল হতে প্রত্যাহার করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে অদ্য সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে আইন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা পাওয়ার পর বিচারক কামরুন্নাহারকে কারণ দর্শাতে বলা হবে।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচারকের (কামরুন্নাহার) পর্যবেক্ষেণ সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে দেয়া আমাদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। তিনি যেটা বলেছেন, তার একটি ইমপ্লিকেশন আছে। এ কারণেই বিচার বিভাগের গার্ডিয়ান প্রধান বিচারপতিকে ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। এই বক্তব্য আমার মনে হয় বিজ্ঞ বিচারকদের জন্য বিব্রতকর। এটা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ভুল নির্দেশনা।

‘এ জন্যই ব্যবস্থা নেয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেটিও আইনানুগভাবে এগিয়ে যাবে। তাকে শো-কজ করা হবে। তিনি কেন এটা বলেছেন তার ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। সেটা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হবে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘আদালতের রায়ের ব্যাপারে আমি কোনো বক্তব্য দেব না। কারণ এই রায়ের পর হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করা যাবে। হাইকোর্ট বিভাগ রায় দিলে আপিল বিভাগে আপিল করা যাবে। এটা হচ্ছে বিচারিক কার্যক্রম।’

তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির চিঠি এখনও পাইনি। সকালে শুনেছি মাননীয় প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন যে তিনি তার (বিচারক) বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করছেন।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘একটা বাক্য আপনারা উল্লেখ করেন। আমি মনে করি এটা না করাই ভালো। সেটা হচ্ছে কেড়ে নেয়া। আইনে যে প্রভিশনস দেয়া আছে, সে অনুযায়ী সব হচ্ছে। মনে হচ্ছে যে জোর করে কেড়ে নেয়া। আসলে এটা জোর করে কেড়ে নেয়া নয়। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে প্রধান বিচারপতির এই ক্ষমতা আছে। তিনি বিচারককে কিছুদিনের জন্য বিচারকাজ থেকে সরিয়ে নিতে পারেন।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞ বিচারকগণ প্রতিদিনই রায় দেন। কেউ সন্তুষ্ট হন, কেউ অসন্তুষ্ট হন। যারা অসন্তুষ্ট হন তারা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। রায় দেয়ার জন্য বিচারককে শাস্তি দেয়া হয়, তা নয়। রায় দেয়ার ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন।

‘কিন্তু এখানে একজন বিজ্ঞ বিচারক ওপেন কোর্টে রায় দেয়ার সময় তার পর্যবেক্ষণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলেছেন ৭২ ঘণ্টা পর কোনো ধর্ষণ মামলা না নিতে। এটাই আপত্তির জায়গা। কোনো ফৌজদারি অপরাধে মামলা করার বিষয়টি তামাদি হয় না।’

এ ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর